আঞ্চলিক

হত্যাসহ ৫ মামলায় চিন্ময়ের জামিন প্রশ্নে রুল জারি

হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহসহ পাঁচটি মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও বিচারপতি মো. সাইফুল ইসলামের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী অক্টোবর মাসে এ রুলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন চিন্ময়ের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।

আদালতের আদেশের বিস্তারিত

আদালত জানিয়েছেন, পাঁচ মামলায় চিন্ময়ের জামিনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টি, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগ। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, এসব মামলার রেকর্ড এবং প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে শুনানি শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

মামলা

২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে। ইসকন থেকে বহিষ্কৃত এ সংগঠককে পরদিন আদালতে তোলা হলে তার জামিন নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ওই সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একইসঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা, আদালতের কাজে বাধা এবং বিস্ফোরক ব্যবহারসহ একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।

গ্রেফতার ও মামলার অগ্রগতি

এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলায় ৫১ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জন কারাগারে রয়েছেন। বাকি আসামিদের মধ্যে কেউ জামিনে আছেন, কেউবা পলাতক।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এ মামলাগুলোর অন্যতম প্রধান আসামি। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তার আইনজীবীদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

চিন্ময়ের জামিন প্রশ্নে রুল জারি হওয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তার সংগঠন সনাতনী জাগরণ জোট বলছে, এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। তাদের মতে, চিন্ময় কৃষ্ণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে সরব ছিলেন বলেই তাকে বারবার টার্গেট করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতাদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অপরাধে জড়িত যেকোনো ব্যক্তির বিচার হওয়া জরুরি। তারা মনে করেন, আদালত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত।

আইন বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মতো গুরুতর অপরাধে জামিন পেতে হলে আসামিকে শক্ত প্রমাণ হাজির করতে হয়। একজন সিনিয়র আইনজীবীর ভাষ্য, “যদি আদালত প্রমাণ পায় যে আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক ভিত্তি মজবুত, তবে জামিন মেলাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।”

তবে তিনি এটিও বলেন, “আদালত সবসময় ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে চান। সুতরাং, রুলের শুনানিতে দুই পক্ষের যুক্তি-তর্কই মূল ভূমিকা রাখবে।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের সহিংসতা এবং হত্যা রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি। আবার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করার পর যে সংঘর্ষ ঘটেছিল, তার দায়ভার কার ওপর বর্তাবে।

তরুণ সমাজের একাংশ বলছে, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কোনো অবস্থানই সহিংসতাকে বৈধতা দিতে পারে না। তারা আদালতের প্রতি আস্থা রাখছেন যে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পদক্ষেপ

অক্টোবর মাসে রুলের শুনানি শেষে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জামিন দেওয়া হবে কি না। আইনজীবীদের ধারণা, মামলার অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, “এ মামলার ফলাফল শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।”

এম আর এম – ১১৩০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button