বাংলাদেশ

জনগণ না চাইলে পিআর পদ্ধতির দাবি থেকে সরে আসবে জামায়াত: গোলাম পরওয়ার

জামায়াতে ইসলামী’র সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশবাসীর সম্মতিতে না হলে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবিতে জোর দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতির পক্ষে থাকলেও গণভোটে জনগণ যা সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি জামায়াত মেনে নেবে।

সেমিনারে মন্তব্য

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও নির্বাচন” শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি না দিলে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আমরা চাই নির্বাচন হোক যথাযথ আইনি কাঠামোর মধ্যে।”
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল দুর্নীতি রোধ ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে গড়িমসি করছে। এতে নির্বাচন কমিশনও রাজনৈতিক চাপের মুখে দুর্বল অবস্থানে পড়ে।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি: পিআরের প্রেক্ষাপট

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা বা পিআর হলো একটি নির্বাচন পদ্ধতি যেখানে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হার অনুযায়ী সংসদে আসন বণ্টন করা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াত সাধারণত এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, কারণ বড় দল হিসেবে তারা সরাসরি ভোটে সুবিধা পেতে চায়।
গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, যদিও দেশের মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশ পিআর পদ্ধতির পক্ষে, তবে জনগণের রায় মেনে চলা জামায়াতের নীতি। যদি জনগণ না চায়, তবে দল পিআর দাবিতে জোর দেবে না।

রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

জামায়াত নেতার এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন ও বিরোধী দলগুলো পিআর নিয়ে যে বিতর্ক চালাচ্ছিল, তা নতুন আঙ্গিক পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জামায়াতের স্থির মনোভাব এবং জনগণের রায় মেনে চলার অঙ্গীকার আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিএনপি সহ অন্যান্য দল পিআর দাবিতে জামায়াতের সঙ্গে সমন্বয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও আইনগত চ্যালেঞ্জ

গোলাম পরওয়ার নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও আইনগত ভিত্তি বিষয়েও তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “দুর্নীতি রোধ ও কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে কিছু রাজনৈতিক দল গড়িমসি করলে নির্বাচন কমিশনও রাজনৈতিক চাপের মুখে দুর্বল অবস্থানে পড়ে। এটি দেশের নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের মন্তব্য নির্বাচনী সংস্কার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে জোরালো করে তুলতে পারে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব রয়েছে নির্বাচনের ন্যায্যতা রক্ষা করা।

অতীতের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতির দাবিকে কেন্দ্র করে বহুবার রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা ও আলোচনা দেখা গেছে।
জামায়াতও আগে বিভিন্ন সময় পিআর পদ্ধতির দাবিতে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই অবস্থান পরিবর্তন করেছে। গোলাম পরওয়ারের এ মন্তব্য তার ধারাবাহিকতারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের এ ধরণের অবস্থান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক। জনগণের রায়কে গুরুত্ব দেওয়া দলীয় নীতিকে আরো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
তবে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো এই অবস্থানকে কিভাবে গ্রহণ করবে এবং নির্বাচনী জটিলতায় কিভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ের সাথে প্রমাণিত হবে।

পরিশেষে

গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য অনুযায়ী, জামায়াত পিআর পদ্ধতির জন্য জনগণের সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে এটি আশ্বাস দিচ্ছে যে, নির্বাচন প্রক্রিয়া জনগণের রায়ের ওপর নির্ভরশীল হবে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এই অবস্থানের সাথে কীভাবে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

এম আর এম – ১১৮৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button