উত্তর প্রদেশে মাজার ও দোকানপাট ভেঙে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্বেগ

উত্তর প্রদেশের সীতাপুর জেলা আবারও খবরের শিরোনামে এসেছে। মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রশাসনের উদ্যোগে কয়েক দশকের পুরনো মাজার এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের দোকানপাট ধ্বংস করা হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও ভয় সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম মুসলিম মিরর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মাজার এবং দোকানগুলো সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা প্রশাসন। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে তারা শান্তিপূর্ণভাবে এই স্থাপনাগুলো ব্যবহার করে আসছিল।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রশাসন মাজার এবং দোকানপাট ধ্বংস করার আগে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে যাতে কোনও ধরনের বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ না ঘটে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিষেক আনন্দের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয় এবং মাহমুদাবাদের তহসিলদারও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি তর্ক ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া:
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই স্থাপনাগুলো সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে এবং তাদের আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা। এ বিষয়ে এডিএম নীতিশ কুমার সিং মন্তব্য করেছেন, “কয়েক দশক ধরে চলে আসা অবৈধ দখল অপসারণের জন্য এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি জমি অবৈধভাবে ব্যবহার করা যাবে না।”
মধ্যযুগীয় মাজার, যা কয়েক দশক ধরে মুসলিম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, ধ্বংস হওয়ার পর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শোক ও উদ্বেগের মেঘ নেমেছে। তারা মনে করছেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ধর্মীয় বৈষম্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পরিস্থিতি:
উত্তর প্রদেশের এই ঘটনা নতুন নয়। বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট এবং মাজারকে ‘সরকারি জমি’ বা ‘অবৈধ নির্মাণ’ উল্লেখ করে গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং একটি নির্বাচনী ও রাজনৈতিক কৌশলের অংশও হতে পারে।
ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, যেমন আমন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এবং হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক সংরক্ষণ সংস্থা, নিয়মিত এই ধরনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তারা দাবি করছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে এই ধরনের পদক্ষেপ সামাজিক উত্তেজনা বাড়ায় এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন গভীর করে।
স্থানীয় মুসলিমদের অভিজ্ঞতা:
সীতাপুর জেলার মাহমুদাবাদ এলাকার বাসিন্দা শামীম আহমেদ বলেন, “এই মাজারটি শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি। আমাদের দোকানপাট ধ্বংস হওয়ায় আমরা ভয় পেয়েছি এবং অনিশ্চয়তায় আছি।”
অন্য এক দোকানদার জানান, “দোকানগুলো বহু বছর ধরে আমাদের পরিবার চালিয়েছে। প্রশাসন আমাদেরকে আগে কোনও নোটিশ দেয়নি, হঠাৎ বুলডোজার দিয়ে সব ধ্বংস করে দেওয়া হলো।”
ধর্মীয় ও সামাজিক প্রভাব:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু সরকারের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের জন্য নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের ঘটনা সামাজিক বন্ধন ও সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থাপনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রতিবাদ ও মানবাধিকার সংগঠন:
বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই ঘটনার প্রতি নজর রাখছে। তারা বলছে, “অবৈধ নির্মাণের শাস্তি দেওয়া যায়, কিন্তু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে ধ্বংসযজ্ঞ মানে মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”
অতীতের অনুরূপ ঘটনা:
গত কয়েক বছরে উত্তর প্রদেশের আলিগড়, লখনউ এবং মেরাঠের মতো শহরগুলোতেও সরকারি জমি উদ্ধারের নামে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। সেই সময়ও প্রশাসন জানিয়েছিল, এগুলো অবৈধ নির্মাণ। কিন্তু স্থানীয়রা অভিযোগ করেছিলেন, তারা বহু দশক ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ওই স্থাপনাগুলো ব্যবহার করছেন।
সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও পূরণ করতে পারে। নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, ভোটের প্রভাব বাড়ানো এবং ধর্মীয় ভাবাবেগকে উত্তেজিত করা এই ধরনের ঘটনায় লক্ষ্য করা যায়
MAH – 12641, Signalbd.com