ঢাবির শেখ মুজিব হলে গাঁজার আসর, আটক ৪ শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শেখ মুজিবুর রহমান হলের একটি কক্ষে গাঁজার আসর বসানোর অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে মুজিব হলের পুরাতন ভবনের ১০৩ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটেছে। আটককৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী।
ঘটনাস্থল ও আটককারীর তথ্য
ঢাবির হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন, আটককৃতরা অন্য হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমান হলে এসে তাদের এক বন্ধুর কক্ষে গাঁজা খাচ্ছিল। পাশের রুমের শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ জানান। পরে দুইজন আবাসিক শিক্ষক ঘটনাস্থলে পৌঁছে চার শিক্ষার্থীকে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেন। আটককৃতরা সবাই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক তদন্ত ও প্রাধ্যক্ষের মন্তব্য
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরণের মাদকের ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য হুমকি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা একে অপরের প্রভাবেই এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল। প্রাধ্যক্ষ বলেন, “আমরা দ্রুততম সময়ে বিষয়টি তদন্ত করছি এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সমস্যার প্রেক্ষাপট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক ব্যবহার নতুন ঘটনা নয়। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন হল ও রুমে গাঁজা, ইয়াবা এবং অন্যান্য মাদকের ব্যবহার নিয়ে কয়েকবার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি চালাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে, কিছু শিক্ষার্থী নিয়মের প্রতি উদাসীন হয়ে থাকায় এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকে।
শিক্ষার্থী ও সমাজে প্রভাব
এ ধরনের ঘটনার প্রভাব শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের উপর দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। মাদকাসক্তি শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত করতে পারে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামাজিকভাবে এই ধরনের খবর শিক্ষার্থীদের পিতামাতা ও অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়ায়।
প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
আটককৃত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যোগাযোগ করছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য কাউন্সেলিং সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম এবং আবাসিক শিক্ষকরা এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত রাউন্ড পরিচালনা করবেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত
মাদকবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক নিয়ন্ত্রণ শুধু শাস্তি দিয়ে সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, মাদকমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পরিবার ও শিক্ষকদের মনোযোগ অপরিহার্য। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “শিক্ষার্থীদের আচরণ পরিবর্তন না হলে ভবিষ্যতে আরও জটিল পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।”
সমাপ্তি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তি রোধ করা এখনই জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ, শিক্ষার্থীদের সচেতনতা এবং পরিবারের মনোযোগ মিলিতভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সামাজিক সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ০৮৮৯, Signalbd.com