বাংলাদেশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি

Advertisement

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ জনগণ দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, দুঃশাসন, ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে একযোগে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এই অভ্যুত্থান ছিল জনগণের ক্ষোভের বিস্ফোরণ, যার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও জনতার ক্ষমতায়ন।

রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানের তাৎপর্য

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ৪ আগস্ট এক বাণীতে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি যৌথ প্রতিরোধ। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে— তারা নির্যাতন, নিপীড়ন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কখনোই মাথানত করে না।”

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণ, এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই অভ্যুত্থান একটি সাহসী বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। এটি ছিল নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য একটি স্বপ্নদ্রষ্টা আন্দোলন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: কেন এই অভ্যুত্থান গুরুত্বপূর্ণ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী নীতির প্রতিবাদে ছাত্র, শ্রমিক, যুব ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদই প্রমাণ করে— জনতার শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি।

এই আন্দোলন কেবল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রথম ধাপও ছিল। আন্দোলনকারীরা মনে করতেন, ন্যায়বিচারহীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, এবং জনগণের কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই হচ্ছে প্রকৃত দেশপ্রেম।

শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা: রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো শহীদদের। তিনি বলেন, “আমি সকল শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, যারা দেশের জন্য তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়েছেন। তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”

তিনি আরও বলেন, যারা এই আন্দোলনে আহত হয়েছেন, যারা চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন— তাদের প্রতি জাতি কৃতজ্ঞ। রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব হলো, শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং তাদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সহায়তা প্রদান।

নতুন বাংলাদেশের পথে: ফ্যাসিবাদবিরোধী আহ্বান

রাষ্ট্রপতি বলেন, “জুলাইয়ের চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠতে পারে একটি সুখী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এজন্য ফ্যাসিবাদী অপশাসনের মূলোৎপাটন জরুরি।”

তিনি আহ্বান জানান, দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন গণতন্ত্র, ন্যায় ও সাম্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকেন। এভাবেই নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে এনে গড়া যেতে পারে এক উদার ও মানবিক বাংলাদেশ।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হয়েছে। রাজনীতিবিদরা বলছেন, এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে গণতন্ত্রের দাবিতে জনগণ সবসময় প্রস্তুত।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানান, “এই অভ্যুত্থান ভবিষ্যতের আন্দোলনগুলোকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। জনগণ বুঝে গেছে— তাদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হওয়া জরুরি।”

সংস্কার প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র একটি বৃহৎ সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সংস্কার কার্যক্রম অভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতা দেবে এবং একটি সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার পথে অনুপ্রেরণা হবে।

চেতনার বাস্তবায়নেই ভবিষ্যতের অগ্রগতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান একটি আন্দোলনের চেয়ে বেশি কিছু— এটি একটি চেতনার নাম। রাষ্ট্রপতির ভাষণে উঠে এসেছে, গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণের ঐক্য, সাহস ও আত্মত্যাগের গুরুত্ব। এখন সময় এসেছে, সেই চেতনাকে বাস্তবায়ন করে দেশের প্রতিটি স্তরে ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার।

বিশ্লেষকদের মতে, এই চেতনা কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়— আদৌ কি আমরা জুলাইয়ের সেই চেতনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি?

এম আর এম – ০৬৮৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button