আঞ্চলিক

পাথর লুটপাটের অভিযোগে আটক ইউপি চেয়ারম্যান

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটের অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভোরে এক যৌথ অভিযানে কোম্পানীগঞ্জ থানা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তার নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযানের বিস্তারিত

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, সাদাপাথর এলাকায় অবৈধভাবে পাথর লুট ও পাচারের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আলমগীর আলমকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করা হয়।
এটি সাদাপাথর লুটপাট সংক্রান্ত ঘটনায় প্রথম গ্রেফতার, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুট

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর গত এক বছরে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা থেকে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে। এসব পাথরের বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি।
একসময়ের মনোরম পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায়, নদীর তলদেশে পানি কমে গিয়ে জায়গাটি এখন ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে।

প্রশাসনের গৃহীত ব্যবস্থা

অবৈধ পাথর লুট ঠেকাতে সম্প্রতি সিলেটের জেলা প্রশাসন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • সাদাপাথর ও জাফলং ইসিএ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনীর টহল
  • গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন
  • অবৈধ ক্রাশিং মেশিন বন্ধ ও তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা
  • অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর জব্দ ও পূর্বের স্থানে পুনঃস্থাপন

পাথর উদ্ধারের সাম্প্রতিক অভিযান

বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত থেকে যৌথবাহিনী পাথর উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। রাতভর ভোলাগঞ্জ সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে শতাধিক ট্রাক ও পিকআপ তল্লাশি চালানো হয়।
এই অভিযানে প্রথম রাতেই প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার সম্ভব হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আরও ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়, যা প্রায় ৭০টি ট্রাকে বহন করা হচ্ছিল। উদ্ধারকৃত পাথর পুনরায় সাদাপাথর এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

পরিবেশগত প্রভাব

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারে উদ্ধারকৃত পাথর তাদের মূল স্থানে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার শুধু স্থানীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং নদীর জীববৈচিত্র্য ও ভূপ্রকৃতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনার পর এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই অভিযানে শুধু নিম্নস্তরের শ্রমিক নয়, মূল হোতাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

পরিবেশবিদরা বলছেন, সাদাপাথর শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। নিয়মিত টহল, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে এ ধরনের লুটপাট প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে, যার ফলে বর্ষাকালে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে।

সারসংক্ষেপ  

সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটপাট নিয়ে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে গ্রেফতারকৃত চেয়ারম্যান আলমগীর আলমসহ অন্যান্য প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্ত কতদূর এগোয়, সেটিই এখন মূল প্রশ্ন।
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে উত্তোলিত সব পাথর উদ্ধার এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

এম আর এম – ০৮৫৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button