বাংলাদেশ

আজ চার জেলায় সড়কে ঝরল ১২ প্রাণ

সকালের আলো ফোটার পরপরই দেশের চার জেলায় সড়কে নেমে আসে ভয়াবহতা। বুধবার (৬ আগস্ট) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চারটি আলাদা দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩২ জন। সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে, যেখানে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

নোয়াখালীতে একসঙ্গে ঝরল ৭ প্রাণ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জগদীশপুর এলাকায় সকালে একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায়। এতে গাড়িতে থাকা একই পরিবারের সাতজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহতদের মধ্যে চারজন নারী এবং তিনজন শিশু রয়েছেন।

জানা গেছে, ওমান থেকে দেশে ফেরা এক প্রবাসীকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা লক্ষ্মীপুরের বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন। পথে অতিরিক্ত গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং গভীর খালে গাড়িটি পড়ে যায়। মাইক্রোবাসে থাকা মোট ১১ জনের মধ্যে চারজন কোনোমতে বাঁচলেও নারী ও শিশুরা পানির গভীরতায় আটকে প্রাণ হারান।

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ৩

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় দুপুরে মসকু পরিবহনের একটি মিনিবাস ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুইজন শিক্ষার্থী এবং একজন সাধারণ যাত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাহাদুরপুর এলাকায় দ্রুতগতির মিনিবাসটি বিপরীত দিক থেকে আসা অটোরিকশাটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজন মারা যান। আহত দুজনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাছে সকালে বাসের ধাক্কায় এক নারী মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এই নারীর পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

ঘটনার সময় পথচারীরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ এখন মর্গে রাখা হয়েছে।

ফরিদপুরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী বিল্লাল খাঁন (৩৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই আরোহী।

পুলিশ জানায়, একটি স্টার ডিলাক্স বাস মডেল মসজিদের সামনে মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। চালকের অসতর্কতা এবং দ্রুতগতিই দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী বহনকারী বাস দুর্ঘটনায় আহত ২৮

চট্টগ্রামের পটিয়া বাইপাস এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস এবং হানিফ পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুই বাসের অন্তত ২৮ যাত্রী আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীবাহী বাসটি বেপরোয়া গতিতে মোড় নেওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা হানিফ বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল: বাড়ছে উদ্বেগ

একই দিনে দেশের চার জেলার পাঁচটি দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু এবং অসংখ্য আহত হওয়ার ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় কতটা নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় দ্রুতগতি, চালকের অসাবধানতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিসংখ্যান বলছে উদ্বেগজনক চিত্র

বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৪-৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রায় ৫,৭০০ জন, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসেই এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

সড়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চালকদের ট্রেনিং, যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণ, স্পিড ব্রেকার ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া এ পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

একজন ট্রাফিক গবেষক বলেন, “প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে সাধারণত একই কারণ থাকে—বেপরোয়া গতি, অবহেলা এবং আইন না মানা। যদি এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে প্রতিদিনই আমরা এমন মৃত্যুর খবর শুনতে থাকব।”

ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

বারবার দুর্ঘটনা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ঈদ, উৎসব বা ছুটির সময় সড়কে মৃত্যু বাড়ে। এই অব্যবস্থাপনা রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে দেশ।

এম আর এম – ০৭১৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button