বাংলাদেশ

ভোটবাক্স এক করতে নীতিগত ঐক্যে ইসলামী দলগুলো, জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো একক প্ল্যাটফর্ম গঠনের দিকে এগোচ্ছে। নির্বাচনকালীন অনিশ্চয়তা এবং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য ভুলে ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য—ইসলামী ভোট এক বাক্সে রাখা, অর্থাৎ বিভক্ত না রেখে সম্মিলিতভাবে নির্বাচনমুখী হওয়া।

এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন,

“ইসলামপন্থীদের সব ভোট এক বাক্সে রাখতে হবে—এই বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত।”

ইসলামী জোট গঠনে নীতিগত সম্মতি

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ–এই তিনটি দল নীতিগতভাবে নির্বাচনী জোট গঠনে সম্মতি জানিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন,

“আমরা শুরু থেকেই ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম সমঝোতার ভিত্তিতে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের কথা ভাবছি।”

অন্যদিকে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জানান,

“জোটের বিষয়টি আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনায় আছে। পাশাপাশি অন্যান্য ইসলামী দলের সাথেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে।”

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন,

“ভোটে ইসলামী দলগুলোর একটি বাক্স দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”

তবে কবে হবে চূড়ান্ত জোট?

যদিও বিভিন্ন দল জোট গঠনে নীতিগতভাবে সম্মত, তবে এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। এর কারণ হিসেবে দলগুলোর নেতারা বলছেন—নির্বাচনী রোডম্যাপ বা সময়সূচি ঘোষিত না হওয়া

জামায়াত মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন,

“নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত না হলে জোট গঠন তেমন কার্যকর হবে না। রোডম্যাপ আসার পরই জোট প্রক্রিয়া গতি পাবে।”

ইউনুছ আহমাদ জানান,

“আমরা ইতিমধ্যেই প্রায় সব ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। জোট গঠনে আমরা আশাবাদী।”

আহমদ আবদুল কাদের বলেন,

“এই মুহূর্তে আমরা চাচ্ছি আগে একটি মজবুত ঐক্য তৈরি হোক, তারপর জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।”

মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন,

“নির্বাচনী রোডম্যাপ ছাড়া জোট গঠন নিয়ে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।”

বিএনপির সাথেও বৈঠক, তবে জোট নয়

ইসলামী দলগুলো শুধু জামায়াত বা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তারা বিএনপির সাথেও বৈঠক করেছে। তবে এই আলোচনাগুলো ছিল নির্বাচন ও রাষ্ট্র পরিচালনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে, নির্বাচনী জোট নিয়ে নয়

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন,

“আমাদের আমির সাহেব বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে নির্বাচন ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে জোটের বিষয়ে নয়।”

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব জানান,

“আমরা বিএনপির কাছে জানতে চেয়েছি—তারা রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালনা করতে চায়।”

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন,

“আমরা ইসলামী দলগুলোর বাইরের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও আলোচনা করছি, কারণ একটি বৃহৎ ঐক্য আমাদের প্রয়োজন।”

ঐক্যের লক্ষ্য: ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান

ইসলামী দলগুলোর নেতারা একমত যে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী ঐক্য গঠনে আগ্রহী

তাদের ভাষায়,

“নির্বাচনী জোট যেভাবেই হোক না কেন, আমরা এক দিকেই যাচ্ছি—একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলকে একত্র করতে হবে।”

কেন এক বাক্সে ইসলামী ভোট?

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলের ভোট ব্যাঙ্ক কখনোই খুব বড় নয়, তবে তা নির্ধারণী ভূমিকা রাখতে পারে বহু আসনে। বিশেষ করে—

  • ধর্মীয় মূল্যবোধনির্ভর ভোটারদের প্রভাব
  • তরুণদের একটি অংশের আগ্রহ
  • ক্ষমতাসীন বিরোধী পক্ষের ভোট বিভাজন

এই প্রেক্ষাপটে ইসলামপন্থী দলগুলো মনে করছে, এককভাবে লড়াই করলে ভোট বিভাজন হবে, যার সুযোগ নেবে বড় দলগুলো। তাই এক বাক্সে ইসলামী ভোট রাখার কৌশল কেবল আদর্শগত নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার লড়াই

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button