আঞ্চলিক

বরগুনায় হাত ‘চিকন’ থাকায় হ্যান্ডকাফ খুলে পালিয়েছে আসামি

 বরগুনা জেলা আদালতের প্রধান গেট থেকে পালিয়েছে এক আসামি। পুলিশের দাবি, তার হাত ছিল এতটাই চিকন যে, হাতকড়া খুলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় সে। ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ এবং দায়িত্বরত পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঘটনা বিস্তারিত: আদালতের গেট থেকেই চম্পট

বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান গেট থেকে পালিয়ে গেছেন মো. আল-আমিন নামের এক আসামি। রোববার (৩ আগস্ট) বিকেল প্রায় ৩টা ৪৫ মিনিটে এই ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, আদালতের কার্যক্রম শেষে আল-আমিনকে কারাগারে পাঠানোর জন্য অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে প্রিজনভ্যানে তোলার প্রস্তুতির সময় হঠাৎ করেই সে হাতকড়া খুলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখের সামনে এভাবে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনার সময় আদালত এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য।

আসামির পরিচয় ও মামলার পটভূমি

পালিয়ে যাওয়া আসামির নাম মো. আল-আমিন (৩২)। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের লেমুয়া-পাঠাকাটা গ্রামের বাসিন্দা। আল-আমিনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে তার প্রথম স্ত্রী একটি পারিবারিক নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

মামলার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর গত শনিবার (২ আগস্ট) পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর রোববার আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

কীভাবে পালাল আল-আমিন?

আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামি আল-আমিনকে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে প্রিজনভ্যানে তোলা হচ্ছিল। ঠিক তখনই সে পুলিশ সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাতকড়া খুলে পালিয়ে যায়।

বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান বলেন, “আসামির হাত চিকন হওয়ায় সে হাতকড়া খুলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

এছাড়াও তিনি জানান, এ ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের গাফিলতি ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হাতকড়ার সাইজ যথাযথ না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে এই ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশের পদক্ষেপ ও অনুসন্ধান

আসামির পালিয়ে যাওয়ার পরপরই পুলিশ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালালেও এখনও পর্যন্ত আল-আমিনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাকে পুনরায় আটক করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

পুলিশ সূত্র বলছে, আদালত এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং আশপাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

অতীতেও এমন ঘটনা

এটাই প্রথম নয়, অতীতে বরগুনা ও দেশের অন্যান্য জেলাতেও পুলিশের হেফাজত থেকে আসামি পালানোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে হাতকড়ার দুর্বলতা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব এবং পুলিশ সদস্যদের অমনোযোগিতা এসব ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

২০২৩ সালে একইভাবে এক আসামি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে হাতকড়াসহ পালিয়ে গিয়েছিল। যদিও পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়, তবে ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে প্রশ্ন উঠেছিল।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

একটি গুরুত্বপূর্ণ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়া মানেই সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে — এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ ও বিশ্লেষকেরা। যদি একজন আসামি এত সহজে হাতকড়া খুলে পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে অন্যরা কেন পারবে না — এই প্রশ্ন এখন জনমনে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কোনো আসামির এভাবে পালিয়ে যাওয়া শুধু পুলিশের ব্যর্থতাই নয়, এটি বিচার ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

তদন্ত কমিটি গঠন ও শাস্তির নির্দেশ

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পর একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন)। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সারসংক্ষেপ  

বরগুনা জেলা আদালত থেকে একজন আসামির হাতকড়া খুলে পালিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। এটি শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নয়, বরং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা, সচেতনতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।

এম আর এম – ০৬৯৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button