লাইভ ক্লাসে চুম্বন দৃশ্য ভাইরাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অশ্লীলতার অভিযোগে তোলপাড়

একটি অনলাইন কোচিং সেন্টারের লাইভ ক্লাসে শিক্ষক ও শিক্ষিকার চুম্বনের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ঘটনাটি ঘিরে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এটি অনিচ্ছাকৃত এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লাইভ ক্লাসেই অশ্লীলতা: ভাইরাল ভিডিও ঘিরে সমালোচনার ঝড়
সম্প্রতি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন কোচিং প্ল্যাটফর্ম ‘অন্বেষণ’-এর একটি লাইভ ক্লাসের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির হিসাববিজ্ঞানের এক পুরুষ শিক্ষক ও এক নারী শিক্ষক ক্লাস চলাকালীন সময়েই চুম্বনে লিপ্ত হচ্ছেন।
এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ, অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ এবং শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে। শুধু ভাইরাল ভিডিও নয়, এটি নিয়ে চলছে আইনগত পদক্ষেপের দাবিও।
কী ঘটেছিল সেই ক্লাসে?
ঘটনার সূত্রপাত গত ৮ জুলাই রাত ১২টার দিকে ‘অন্বেষণ’ নামক অনলাইন কোচিংয়ের একটি লাইভ ক্লাসে। হিসাববিজ্ঞানের পাঠদানের সময় হঠাৎ করেই দুই শিক্ষক নিজেদের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অবস্থায় চুম্বনরত হন। পুরো ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল ইউটিউবে।
ভিডিওটি রেকর্ড করে কিছুক্ষণ পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়, এবং সৃষ্টি হয় ব্যাপক আলোড়নের।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
ঘটনার পর পরই প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালক আকাশ ও অর্ক একটি বিবৃতি দেন। তারা জানান, এই কাজ সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ও লজ্জাজনক। তারা বলেন, “আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্মের ইউটিউব ও ফেসবুক পেইজের এক্সেস শিক্ষকদের দিয়েছিলাম। আমরা ভাবতেও পারিনি যে তারা এমন অপেশাদার আচরণ করবেন।”
তারা আরও বলেন, “ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত ও লজ্জিত। শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট দুই শিক্ষককে অন্বেষণ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়েছি।”
উদ্দেশ্যমূলক মার্কেটিং না ভুল?
এদিকে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এই ঘটনা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে ‘ভাইরাল মার্কেটিং’-এর উদ্দেশ্যে। ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “লাইভ ক্লাসে চ্যাট অপশন থাকে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে আর কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না — এটা মানা কঠিন।”
তাদের মতে, এটি হতে পারে “ব্যাড মার্কেটিং ইজ গুড মার্কেটিং” দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ, যেখানে নেতিবাচক ঘটনাকে ব্যবহার করা হয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার জন্য।
থানায় অভিযোগ, আইনি পদক্ষেপের আহ্বান
ঘটনার জেরে আজ (৯ জুলাই) দুপুরে ভাটারা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আশরাফ বিজয় নামে এক অভিভাবক। তিনি জানান, “আমি একজন অভিভাবক হিসেবে এই অশ্লীলতা মেনে নিতে পারিনি। আমি বিচার চাই।” অভিযোগপত্রে ভিডিওটি শিক্ষার্থীদের ওপর ‘নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ভিডিওটি অপরাধের প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
অশ্লীলতার প্রভাব: শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা তৈরি হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করে এদের ক্লাস করি। লাইভে এমন কিছু ঘটলে আর কার ওপর ভরসা করবো?”
একজন অভিভাবক বলেন, “অনলাইনে ক্লাস মানেই নিরাপদ ভাবছিলাম। কিন্তু এখন দেখি, শিক্ষকদের আচরণেই পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।”
প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
‘অন্বেষণ’ তাদের ফেসবুক পেইজে দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার জন্য দুঃখিত এবং ভবিষ্যতে এমন কিছু যেন না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখবে। তারা আরও জানিয়েছে, “কমার্স বিভাগের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক সাপোর্ট দিতে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।”
শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনা আমাদের সামনে আবারও প্রশ্ন তোলে — অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মে শিক্ষক নিয়োগ ও ক্লাস পরিবেশের মানদণ্ড ঠিক কীভাবে নির্ধারিত হচ্ছে? লাইভ ক্লাসের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষকদের আচরণগত মূল্যায়ন — সবই এখন সময়ের দাবি।
“লাইভ ক্লাসে চুম্বন শুধু অশ্লীল নয়, এটি শিক্ষার পরিবেশের ওপর সরাসরি আঘাত”—একজন অভিভাবক
লাইভ ক্লাসে চুম্বনের এই ঘটনা অনলাইন শিক্ষার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অন্বেষণ কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থায় যে ফাটল ধরেছে, তা মেরামত সহজ হবে না।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার এক নতুন চ্যালেঞ্জ — প্রযুক্তি ব্যবহার যেমন আশীর্বাদ হতে পারে, তেমনি অব্যবস্থাপনায় তা অভিশাপও হয়ে উঠতে পারে।
এম আর এম – ০২৫৭, Signalbd.com