২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট আসছে ১ জুন

আগামী ১ জুন ২০২৫ থেকে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে নতুন সিরিজের ব্যাংক নোট। প্রথম দফায় বাজারে আসছে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের তিনটি নোট। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন নোটগুলোতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকছে না। এটি বাংলাদেশের মুদ্রানীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’ শীর্ষক ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে এই নতুন নোটগুলো। নতুন এই ডিজাইন ধারায় দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের পরিচয় ফুটে উঠবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
২৯ মে বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “নতুন নোটগুলোতে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকছে না। আমরা ধাপে ধাপে অন্যান্য মূল্যমানের নোটেও একই ধরনের পরিবর্তন আনবো।”
আরিফ হোসেন খান আরও জানান, নতুন সিরিজের এসব নোটে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, ষাট গম্বুজ মসজিদসহ জাতীয় ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গভর্নরের স্বাক্ষরিত নতুন নোট
নতুন নোটগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের স্বাক্ষর থাকবে। ১ জুন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে এই নোট সরবরাহ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য আঞ্চলিক অফিসগুলোতেও নতুন সিরিজের নোট সরবরাহ করা হবে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করে জানিয়েছে, নতুন সিরিজের নোট বাজারে আসলেও বর্তমানে প্রচলিত সব ধরনের কাগুজে টাকা ও ধাতব মুদ্রা বৈধ এবং চালু থাকবে।
সংগ্রাহকদের জন্য স্পেসিমেন নোট
মুদ্রা সংগ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সিরিজের নমুনা বা ‘স্পেসিমেন’ নোটও ছাপিয়েছে। এগুলো ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকার নমুনা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যা সাধারণ ব্যবহারের জন্য নয়। শুধুমাত্র সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত মূল্যে মিরপুরের টাকা জাদুঘর থেকে সংগ্রাহকেরা এগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়া: মতপার্থক্যের সূত্রপাত
নতুন নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি না রাখার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল বাংলাদেশি টাকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকেই মনে করছেন, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক আদর্শিক অবস্থানে বড় রকমের সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে ডিজাইন ও ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অবজ্ঞা করার কোনো উদ্দেশ্য নেই বলেও তারা জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “নোটের ডিজাইনে পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এর ব্যাখ্যা আরও পরিস্কারভাবে দিতে হবে।”
অপর এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “নতুন নোটগুলো দেখতে আধুনিক, নিরাপদ এবং সংগ্রহযোগ্য। এটি দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় এক ধরণের সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে।”
নতুন নোটের সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্যসমূহ (অফিশিয়াল ঘোষণা সাপেক্ষে)
- প্রতিটি নোটে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের রঙিন ছবি থাকবে
- উন্নত নিরাপত্তা ফিচার যেমন হোলোগ্রাফিক স্ট্রিপ, জলছাপ
- ব্রেইল চিহ্ন থাকবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য
- উন্নত মানের কাগজ এবং ছাপার প্রযুক্তি
জাতীয় ঐতিহ্য তুলে ধরার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন উদ্যোগকে অনেকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, এতে দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ইতিহাস আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরা যাবে। শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি শিক্ষণীয় একটি দৃষ্টান্ত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নোট চালুর এই উদ্যোগ শুধু একটি আর্থিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। তবে এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত সাধারণ জনগণের জন্য নতুন নোটগুলোর নকশা, প্রাপ্যতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই।