বানিজ্য

নগদের সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সাফায়েত আলম

মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মো. সাফায়েত আলম। গত ১২ মে (সোমবার) তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৪ মে (বুধবার) প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) খাতে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদের অগ্রযাত্রায় সাফায়েত আলমের ভূমিকা দীর্ঘদিনের। ২০১৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরুর আগেই তিনি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর সাত বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে আছে অপারেশন, নেটওয়ার্ক, বিজনেস স্ট্র্যাটেজি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সরাসরি নেতৃত্বদান।

আদালতের রায় ও প্রশাসক নিয়োগের প্রেক্ষাপট

নগদের নেতৃত্বে এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রেক্ষাপট। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে একটি প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন মো. সাফায়েত আলম। এরপর ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত নগদে প্রশাসক নিয়োগকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেন।

এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির পূর্বের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কাঠামো পুনরায় কার্যকর হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় মো. সাফায়েত আলম নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আদালতের এই রায় শুধু নগদের জন্য নয়, বাংলাদেশের আর্থিক প্রযুক্তি খাতের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অঙ্গীকার

সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এক বিবৃতিতে সাফায়েত আলম বলেন,

“বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটি নিয়ম ও বিধি অনুসরণ করেই নগদ একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে গ্রাহকসেবা আরও উন্নত করা।”

তিনি আরও বলেন,

“দেশে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রচেষ্টাকে বেগবান করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নগদ তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও গ্রাহককেন্দ্রিক সেবার মাধ্যমে মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। এই সেবার পরিধি আরও বাড়াতে আমরা কাজ করব।”

সাফায়েত আলমের এই মন্তব্য নগদের ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। নতুন নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি কেবল আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই নয়, বরং ডিজিটাল অর্থনীতির পূর্ণ সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায়।

সাফায়েত আলমের পেশাগত অভিজ্ঞতা

মো. সাফায়েত আলম বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও টেলিকম খাতের এক সুপরিচিত নাম। তিন দশকেরও বেশি সময় তিনি বিভিন্ন খাতে পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি
  • টেলিকমিউনিকেশন সেক্টর
  • ইনফরমেশন টেকনোলোজি
  • ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস

ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সাফায়েত আলম একাধিক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনায় বিশেষ দক্ষতা তাকে নগদের নেতৃত্বে উন্নীত করেছে।

নগদের বর্তমান অবস্থা ও বাজারে অবস্থান

বাংলাদেশের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেক্টরে নগদ বর্তমানে একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান। বিকাশ ও রকেটের মতো প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নগদ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশাল গ্রাহকভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি দেশের সাড়ে সাত কোটির বেশি গ্রাহককে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে।

নগদের জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে এর ব্যবহারবান্ধব অ্যাপ, কম খরচে লেনদেনের সুবিধা, সরকার-নির্ধারিত ভাতা বিতরণে অংশগ্রহণ এবং ব্যাপক প্রচারণাভিত্তিক উদ্ভাবনী কার্যক্রম। বিশেষ করে সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় ভাতা বিতরণে নগদের ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসিত।

নেতৃত্বে পরিবর্তনের প্রভাব

নগদের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বে পরিবর্তন সবসময়ই উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। তবে মো. সাফায়েত আলমের দীর্ঘ সময় ধরে কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং অপারেশনাল দক্ষতা প্রতিষ্ঠানটির জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। অভ্যন্তরীণ স্ট্রাকচার ও নীতি নির্ধারণে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সাম্প্রতিক সময়ে নগদ যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক, নিরাপত্তা ঝুঁকি, গ্রাহক অভিজ্ঞতা—সেইসব জায়গায় সঠিক নেতৃত্বের গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নতুন সিইও হিসেবে সাফায়েত আলম সেই প্রত্যাশা পূরণে কীভাবে কাজ করেন, সেটাই এখন সময়ের প্রশ্ন।

উপসংহার

নগদের সিইও হিসেবে মো. সাফায়েত আলমের দায়িত্ব গ্রহণ প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আইনি জটিলতা এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর এই নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানটির স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডিজিটাল আর্থিক সেবার দুনিয়ায় নগদের অবস্থান আরও সুসংহত ও আধুনিক করার লক্ষ্যে তিনি যেভাবে অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে দেশের এমএফএস খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button