গোমাংস-ভক্ত রণবীরই করছেন রামায়ণে ‘রাম’ চরিত্রে অভিনয়!

রামায়ণের টিজার প্রকাশের পরেই নতুন বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে একটি পুরনো সাক্ষাৎকার। ‘রাম’ চরিত্রে রণবীর কাপুরের অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। বিতর্কের কেন্দ্রে তাঁর ‘গোমাংস খাওয়া’ সংক্রান্ত বক্তব্য ও জীবনযাপন।
রামায়ণের টিজার ও চরিত্র ঘোষণা
নীতেশ তিওয়ারির পরিচালনায় নির্মিত “রামায়ণ” সিনেমাটি ইতোমধ্যেই বলিউডের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবির তকমা পেয়েছে (প্রায় ৮৩৫ কোটি রুপি)। রণবীর কাপুর অভিনয় করছেন ‘রাম’ চরিত্রে, যশ অভিনয় করছেন ‘রাবণ’ চরিত্রে এবং সাই পল্লবী থাকছেন ‘সীতা’ চরিত্রে।
সম্প্রতি, ছবির প্রথম ঝলক প্রকাশিত হয়। মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই, হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন শহরে টিজার প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। VFX ও সিনেমাটোগ্রাফির দিক থেকে টিজারটি প্রশংসিত হলেও, মূল বিতর্ক শুরু হয় রণবীরের অতীত মন্তব্য নিয়ে।
পুরনো মন্তব্য ঘিরেই নতুন বিতর্ক
২০০৮ সালের একটি সাক্ষাৎকারে রণবীর কাপুর বলেছিলেন, তিনি “পায়া, নেহারি, ভুনা” জাতীয় গোমাংসজাত খাবারের বড় ভক্ত। পুরনো সেই ভিডিও আবার ভাইরাল হয়েছে টিজার প্রকাশের পরপরই।
বিতর্কিত সিনেমা বিশ্লেষক কমল রশিদ খান (কেআরকে) এক্স (পুরোনো টুইটার) হ্যান্ডেলে লেখেন, “রণবীর নিজেই বলেছেন তিনি একজন বড় গোমাংসভোজী। এখন দেখা যাক, মানুষ তাকে রামের চরিত্রে গ্রহণ করে কিনা।”
এই মন্তব্যের পর নেটিজেনদের একাংশ কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। অনেকেই বলেন, “যিনি গোমাংস খান, তাঁকে কীভাবে ভগবান রামের চরিত্রে মেনে নেওয়া যায়?”
সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়া
এই বিতর্কে নেটিজেনরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, একজন অভিনেতার ব্যক্তিগত পছন্দ বা খাবারের সঙ্গে তাঁর চরিত্রের মিল খুঁজে দেখা অনুচিত। আবার কেউ বলছেন, “রাম” চরিত্র এমন একজনের হাতে থাকা উচিত, যিনি বাস্তব জীবনেও কিছুটা ধার্মিক আদর্শ অনুসরণ করেন।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, “রামের মতো চরিত্রে এমন কাউকে দেখা উচিত, যার জীবনের আদর্শও ন্যূনতম মিল রাখে রামের চরিত্রের সঙ্গে।”
অন্যদিকে, অনেকে এটাকে “অনাবশ্যক বিতর্ক” বলেও উল্লেখ করেছেন। গায়িকা চিন্ময়ী শ্রীপদা রণবীরের পক্ষ নিয়ে বলেন, “ঈশ্বরের নাম করে যদি কোনো ধর্ষক বাবাজি ছাড়া পেয়ে যায়, সেখানে একজন অভিনেতা কী খাচ্ছেন, তা নিয়ে এত আলোচনা কেন?”
বয়কট কালচার বনাম বলিউড স্টারডম
রণবীর কাপুর অতীতেও বয়কট কালচারের মুখে পড়েছেন। “ব্রহ্মাস্ত্র” সিনেমার সময়ও অনেকে তাঁকে ও আলিয়াকে বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও সিনেমাটি বক্স অফিসে সফল হয়।
তাঁর সাম্প্রতিক সিনেমা “অ্যানিম্যাল” নানা বিতর্ক সত্ত্বেও বছরের অন্যতম সফল সিনেমা হয়েছে।
তাই অনেকেই বলছেন, বিতর্ক থাকলেও দর্শকের মন জয় করতে পারলেই তা প্রভাব ফেলবে না ব্যবসার উপর।
চরিত্রের উপযুক্ততা নিয়ে বিতর্কের গভীরে
এই বিতর্ক একটুখানি ফিল্মি গসিপ নয়, বরং এটি ভারতের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। “রাম” শুধু একটি চরিত্র নয়, কোটি মানুষের বিশ্বাসের প্রতীক। ফলে, এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে যাওয়া অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ভারতীয় দর্শকদের একাংশ ধর্মীয় অনুভূতিকে খুব গুরুত্ব দেয়। তাই রামায়ণের মতো সংস্কৃতিক ভিত্তিসম্পন্ন প্রজেক্টে কাস্টিং বাছাই অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রক্রিয়া।”
সারসংক্ষেপ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রকাশ পেয়েছে বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রজেক্ট “রামায়ণ”-এর প্রথম ঝলক। যেখানে ‘রাম’ চরিত্রে অভিনয় করছেন রণবীর কাপুর। টিজার প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও—সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। কেবল অভিনয় নয়, বরং রণবীরের ব্যক্তিগত জীবন এবং খাদ্যাভ্যাস ঘিরে উঠেছে প্রশ্ন। বিতর্কের কেন্দ্রে তাঁর ‘গোমাংস খাওয়া’ সংক্রান্ত একটি পুরনো ভিডিও ও মন্তব্য।
রামায়ণের টিজার প্রকাশের পর দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে—একদিকে টিজারের ভিজ্যুয়াল ও স্কেল নিয়ে উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে রণবীরের অতীত মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক। এখন দেখার বিষয়, দর্শক আসলে কাকে বেশি গুরুত্ব দেন—চরিত্রের অভিনয় নাকি অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, “পরবর্তী ট্রেলার, প্রচারণা কৌশল এবং সিনেমার চূড়ান্ত রূপই ঠিক করবে বিতর্ক থেমে যায় নাকি আরও জোরালো হয়।”
এম আর এম – ০২০৩, Signalbd.com