বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানায় অবতরণের সময় বিমান বিধ্বস্ত

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানার কালিস্পেল শহরে অবতরণের সময় এক ছোট যাত্রীবাহী বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্ক করা বেশ কয়েকটি বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে আশার কথা, এ দুর্ঘটনায় কোনো বড় ধরনের প্রাণহানি বা গুরুভাবে আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও এ ঘটনায় পার্ক করা বিমানের মধ্যে কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আগুন লেগে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঘটনা কোথায় এবং কিভাবে ঘটলো?

মন্টানার কালিস্পেল শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ছোট একটি বিমানবন্দরে সোমবার দুপুর ২টার দিকে স্থানীয় সময়, চার যাত্রীবাহী এক ইঞ্জিনের টার্বোপ্রপ বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করছিল। তখন পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়ে থেকে পড়ে গিয়ে পার্ক করা অন্য বিমানের সঙ্গে ধাক্কা মারে। এই সংঘর্ষের ফলে একাধিক বিমানে আগুন লেগে যায় এবং আগুনের শিখা ঘাসে ছড়িয়ে পড়ে।

কালিস্পেল ফায়ার ডিপার্টমেন্ট দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কোনো প্রাণহানির খবর না পাওয়া গেলেও দুজন যাত্রী সামান্য আহত হন এবং তারা ঘটনাস্থলেই চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিমানের ধ্বংসস্তূপ এবং পরবর্তী অবস্থা

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানা গেছে, বিমানটি রানওয়ের শেষ প্রান্তে জরুরি অবতরণ করার সময় অপর একটি বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়েছে। বিমান থামার পর যাত্রীরা নিজেরা বিমানের বাইরে আসতে সক্ষম হন, যা বড় ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করেছে। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় বিশাল কালো ধোঁয়া ও শব্দের সৃষ্টি হয়, যা আশেপাশের এলাকাকে কেঁপে দেয়।

বিমানের পরিচিতি ও মালিকানার তথ্য

ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের (NTSB) তথ্য মতে, বিধ্বস্ত বিমানটি ছিল ২০১১ সালে নির্মিত সোকাতা টিবিএম ৭০০ টার্বোপ্রপ মডেল। এটি ওয়াশিংটনের পুলম্যান থেকে উড্ডয়নের পর মন্টানার কালিস্পেল বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। বিমানের মালিক ছিলেন পুলম্যান ভিত্তিক ‘মিটার স্কাই এলএলসি’। এই সংস্থার পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় প্রশাসনের বিবৃতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কালিস্পেল পুলিশের প্রধান জর্ডান ভেনেজিও এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব দিক নিয়ে তদন্ত চলছে। তারা নিশ্চিত করেছেন যে এই দুর্ঘটনার পেছনে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কড়াকড়ি চালানো হবে।

কালিস্পেল ফায়ার চিফ জে হাগেন বলেন, “দূর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকারী দল দ্রুত কাজ করেছে। যাত্রীরা নিরাপদে বিমানের বাইরে বের হয়ে আসতে পেরেছেন, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছে।”

দুর্ঘটনার প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

কালিস্পেল বিমানবন্দরটি ছোট হলেও প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস করা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় এ ধরনের দুর্ঘটনা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এফএএ ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাইলটদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এবং বার্তাসংস্থা এপি এই দুর্ঘটনার তথ্য সরাসরি আমেরিকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে গ্রহণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি ব্যাপক মনোযোগ পেয়েছে কারণ এটি বিমান নিরাপত্তা ও বিমানবন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন করে সতর্কতার সংকেত।

বিমান দুর্ঘটনার কারণ এবং বিমানের নিরাপত্তা

বিমান দুর্ঘটনা সাধারণত আবহাওয়া পরিস্থিতি, যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল, অথবা বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে ঘটে থাকে। মন্টানার এই দুর্ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে তদন্তের শেষে বিস্তারিত কারণ জানা যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়া প্রতিটি ঘটনাই এক শিক্ষার জায়গা। নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছোট বিমানগুলো যদিও সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু সঠিক নিয়ন্ত্রণ না হলে তারা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই পাইলটদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং বিমানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খুব জরুরি।

দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন দুর্ঘটনা আতঙ্কিত করলেও, যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার হওয়ায় তারা কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছেন। তবে তারা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দাবী জানিয়েছেন।

বিশ্বব্যাপী বিমান দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন

গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিমান নিরাপত্তার গুরুত্বও বেড়েছে। প্রতিটি দেশেই বিমান দুর্ঘটনা রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাহায্যে বিমান চলাচল আরও নিরাপদ করার চেষ্টা চলছে।

সংক্ষেপে: কী শিখলাম এই দুর্ঘটনা থেকে?

  • পাইলট ও বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
  • বিমানবন্দরের সঠিক পরিচালনা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অপরিহার্য
  • তৎক্ষণিক উদ্ধার ও সেবা যাত্রীদের জীবন রক্ষা করে
  • দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে আরও উন্নত পরিকল্পনা নেয়া যায়

ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা

এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সঠিক প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি ও নিয়মিত পর্যালোচনা এসবে বড় ভূমিকা পালন করবে।

মন্টানায় ছোট একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও যাত্রীদের নিরাপদে বাঁচানো এবং দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে বড় বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে এ ঘটনা আমাদের সবাইকে বিমান নিরাপত্তার প্রতি আরও দায়িত্বশীল হতে সতর্ক করেছে। আশা করা যায়, তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হবে এবং বিমান চলাচল আরও নিরাপদ হবে।

MAH – 12271 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button