সাগর হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজের চার দিনের রিমান্ড

রাজধানীর মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মো. সাগর নামে এক হকারের হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক মো. জুয়েল রানা এই আদেশ দেন। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ মমতাজ বেগম শুধু একজন খ্যাতনামা শিল্পীই নন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
গ্রেফতার ও রিমান্ডের পটভূমি
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা সাগর হত্যা মামলায় মমতাজ বেগমকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম আসামির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। অন্যদিকে, মমতাজের পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, সোমবার (১২ মে) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনের একটি বাসা থেকে মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
মামলার বিবরণ
মামলার – দ aye (Truncated due to length) …
রিমান্ডের তা৸ব
রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়েছে, সাগর হত্যার ঘটনায় মমতাজ বেগমের সরাসরি বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। রিমান্ড আবেদনে আরও দাবি করা হয়, মমতাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়নের জন্য তার ক্যাডার বাহিনীকে উৎসাহিত করেছিলেন। এই আন্দোলনে তার নির্দেশে বা প্ররোচনায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে, যার ফলে মো. সাগর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা মনে করছেন, মমতাজের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং পলাতক অন্যান্য আসামিদের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তবে, মমতাজের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন।
মমতাজের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যাত্রা
মমতাজ বেগম, যিনি ‘সুর সম্রাজ্ঞী’ হিসেবে পরিচিত, বাংলা লোকগানের একটি কিংবদন্তি নাম। তিনি তার চার দশকের ক্যারিয়ারে ৭০০টিরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন এবং তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। রাজনীতিতে তিনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হন। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তবে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মমতাজের গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনা দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তার ভক্তরা এবং কিছু রাজনৈতিক নেতা এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থকরা এই গ্রেফতারকে ন্যায়বিচারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। আদালতে মমতাজকে তোলার সময় কিছু আইনজীবী তার বিরুদ্ধে ‘ফাইট্টা যায়’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন, যা ঘটনার তীব্রতা প্রকাশ করে।
তদন্তের পরবর্তী ধাপ
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, মমতাজের চার দিনের রিমান্ডকালে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত আরও গভীর করা হবে। মামলায় এজাহারনামীয় ২৪৩ জন এবং ২৫০-৪০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে, যাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন। তদন্তকারী সংস্থা এই মামলায় সব আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।
উপসংহার
মো. সাগর হত্যা মামলায় মমতাজ বেগমের রিমান্ড বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এটি কেবল একটি ফৌজদারি মামলার তদন্তই নয়, বরং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি এবং বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার একটি পরীক্ষাও। আগামী দিনগুলোতে এই মামলার অগ্রগতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।