বিশ্ব

সোহাগ হত্যাকে ‘হিন্দু নিপীড়ন’ বলছে নেশাগ্রস্থ ভারতীয় মিডিয়া!

Advertisement

রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। অথচ ভারতীয় কিছু মিডিয়া এই ঘটনাকে হিন্দু সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে তুলে ধরছে—যেখানে বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। বিশ্লেষকরা বলছেন, উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা

গত ৯ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ঘটে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। জনাকীর্ণ এলাকায় শত শত মানুষের সামনে নৃশংসভাবে খুন হন লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯), পেশায় একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কীভাবে তাঁকে সড়কে ফেলে পাথর, ইট এবং লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদের উল্লাস, পাশবিকতা এবং বর্বরতা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা: “হিন্দু ব্যবসায়ী খুন”

এই মর্মান্তিক ঘটনাটি নিয়ে যখন বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের দাবি উঠছে, তখনই ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম একে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করতে শুরু করে। ইন্ডিয়া টুডে, উইওন, নামাস্তে তেলেঙ্গানা-সহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, নিহত সোহাগ একজন “হিন্দু ব্যবসায়ী” এবং তিনি সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

ইন্ডিয়া টুডে তার প্রতিবেদনে একটি পুরোনো হিন্দু বিক্ষোভের ছবি ব্যবহার করেছে—যার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের প্রতিবেদনে এমন একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে, যেন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা চলছে এবং সোহাগ তার শিকার।

তবে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিহতের পরিবার। নিহত সোহাগ একজন মুসলিম ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে ক্ষোভ ও উদ্বেগ

ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন ভুয়া প্রচারে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশে এমনিতেই সংবেদনশীল ধর্মীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে বহু বছর ধরে প্রচেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে কোনো ভ্রান্ত তথ্য পুরো সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় মিডিয়ার এমন আচরণ আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অংশ হতে পারে, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করা।

এমন ঘটনা এই প্রথম নয়

এই প্রথম নয়, এর আগেও ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। কখনো নির্বাচন, কখনো ধর্মীয় ইস্যু—প্রতিবারই কিছু সংবাদমাধ্যম তথ্য যাচাই না করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। এতে শুধু ভুল বার্তা ছড়ায় না, বরং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে।

রাজনৈতিক যোগসূত্র ও মামলার অগ্রগতি

নিহত সোহাগের পরিবারের অভিযোগ, এটি কোনো সাধারণ খুন নয়; এটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। তিনি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী হলেও তাঁর সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক পক্ষের বিরোধ ছিল। পুলিশ ইতোমধ্যে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার কার্যক্রম শুরু করেছে। অস্ত্র আইনে একটি পৃথক মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনায় যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সংগঠন থেকেও তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের ভেতরে এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর বিকৃত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের উচিত দ্রুত ও সঠিক তথ্য তুলে ধরা, যাতে অপপ্রচার প্রতিহত করা যায়।

বাংলাদেশের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ভারতীয় মিডিয়ার এই ধরনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

“নিহত সোহাগ মুসলিম ছিলেন, এবং হত্যার সঙ্গে কোনো সাম্প্রদায়িক বিষয় জড়িত নেই—এটা স্পষ্ট। ভারতীয় মিডিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল তথ্য প্রচার করছে”—একজন তদন্ত কর্মকর্তা।

সত্য প্রতিষ্ঠায় করণীয় কী?

এই ঘটনায় যেমন দ্রুত বিচার প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা। অপপ্রচারের যুগে বিভ্রান্তি ঠেকাতে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব আরও বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে যেন মিথ্যা প্রচারণা বিশ্বাস না করে কেউ।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে সরকার, তদন্ত সংস্থা ও মিডিয়ার ভূমিকার ওপর।

 এম আর এম – ০৩১৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button