বিশ্ব

ট্রুডোর বিদায়, কার্নির শপথ

কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় বছরের শাসন শেষে বিদায় নিচ্ছেন জাস্টিন ট্রুডো। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন লিবারেল পার্টির নবনির্বাচিত নেতা এবং কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি। আগামীকাল শুক্রবার তিনি কানাডার ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। তাঁর সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শপথ নেবেন বলে জানিয়েছে দেশটির গভর্নর জেনারেলের কার্যালয়।

নেতৃত্বে পরিবর্তন: ট্রুডোর বিদায়ের কারণ

২০১৫ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে ওঠেন জাস্টিন ট্রুডো। তাঁর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি কানাডায় একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনি লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ মন্ত্রিসভা গঠন করেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং শরণার্থী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করেন।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমতে থাকে। বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যায়, ট্রুডোর প্রতি সমর্থন কমছে এবং দলের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দা, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া তাঁকে চাপে ফেলে। এসব কারণেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

লিবারেল পার্টির নতুন নেতা: মার্ক কার্নি

লিবারেল পার্টির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে দলের নেতৃত্বে আসেন মার্ক কার্নি। তিনি অর্থনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত এবং কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর অর্থনৈতিক দূরদর্শিতা এবং অভিজ্ঞতা তাঁকে নতুন নেতৃত্বের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

লিবারেল পার্টির প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর কার্নি বলেন, “এটি কানাডার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা নতুন করে আত্মবিশ্বাসীভাবে পথ চলব এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করব।” তিনি আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত, কানাডা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমানতালে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে। হকির মতো বাণিজ্যেও কানাডা জিতবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ও চ্যালেঞ্জ

কার্নি এমন এক সময় কানাডার নেতৃত্ব গ্রহণ করছেন, যখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নীতির কারণে কানাডা বাণিজ্য সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কার্নি আত্মবিশ্বাসী যে তিনি এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তিনি বলেছেন, “আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই বাণিজ্যচুক্তিতে সুবিধাজনক অবস্থান অর্জন করব।”

নতুন মন্ত্রিসভা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

কার্নির নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার গঠন নিয়েও আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি অর্থনীতিবিদ ও দক্ষ প্রশাসকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করবেন। তাঁর প্রধান লক্ষ্য থাকবে—অর্থনীতির উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কানাডার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।

এদিকে, ট্রুডো তাঁর বিদায়বার্তায় বলেন, “আমি আমার সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করেছি। নতুন নেতৃত্ব আসছে, আমি তাদের জন্য শুভকামনা জানাই।”

উপসংহার

কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পরিবর্তন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। ট্রুডোর দীর্ঘ শাসনের পর কার্নির অভিজ্ঞ নেতৃত্ব কেমন ভূমিকা রাখবে, তা দেখার বিষয়। তবে দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা তাঁর জন্য একটি বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। কানাডার জনগণ এখন অপেক্ষা করছে নতুন সরকারের নীতির দিকে, যা আগামী দিনের দিকনির্দেশনা ঠিক করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button