বানিজ্য

পণ্যবাহী ট্রেনের অভাবে কনটেইনার জমে যাচ্ছে

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার প্রায় সোয়া দুই গুণ বেশি কনটেইনার জমে গেছে। বর্তমানে এখানে ঢাকার কমলাপুরে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ১ হাজার ৮১১টি কনটেইনার। অথচ বন্দর ইয়ার্ডের মোট কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৮২৫ একক, যার মানে ৯৮৬টি অতিরিক্ত কনটেইনার বন্দরে জমে রয়েছে। এর ওপর, বহির্নোঙরে খালাসের অপেক্ষায় আছে আরও ৪০০–৫০০ কনটেইনার, যা সামনের দিনে চাপ আরও বাড়াবে।

পণ্যবাহী ট্রেনের অভাব

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পণ্যবাহী ট্রেনের অভাবে এসব কনটেইনার ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো যাচ্ছে না। রেলওয়ে বিভাগ জানায়, পর্যাপ্ত ইঞ্জিনের অভাবে তারা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে পারছে না। গত এক বছর ধরে এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে এবং আগামী দু-তিন বছরেও ইঞ্জিনের সংকট দূর হবে না।

আমদানিকারকেরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুরগামী কনটেইনারবাহী ট্রেন বর্তমানে দুটি চলে, অথচ প্রয়োজন চার–পাঁচটির। ট্রেনের অভাবে বন্দর থেকে কমলাপুরে কনটেইনার নিতে ১৫–১৬ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

রমজানের প্রভাব

পবিত্র রমজান মাসের আগে বন্দরে কনটেইনারের স্তূপ জমে যাওয়ায় এবং কনটেইনার পরিবহনে বিলম্ব ঘটায় আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তারা বলেন, পণ্য পরিবহনে দেরি হলে বন্দরের মাশুল চার্জ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর চাপ পড়বে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি-রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৩ শতাংশ রেলপথে, ১ শতাংশের কম নৌপথে এবং বাকি ৯৬ শতাংশ সড়কপথে আনা-নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি ও খালি অবস্থায় আনা-নেওয়া হয়েছে ৮৮ হাজার একক কনটেইনার।

রেলওয়ের সংকট

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র পাঁচ–ছয়টি। এসব ইঞ্জিন দিয়ে কনটেইনার ও তেলবাহী ট্রেন চালাতে হয়।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “ইঞ্জিন সংকটের কারণে দুটির বেশি কনটেইনারবাহী ট্রেন চালানো যাচ্ছে না।” তিনি জানান, কনটেইনার পরিবহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছু ইঞ্জিন দ্রুত মেরামত করে চলাচল উপযোগী করার চেষ্টা চলছে।

সমাধানের উদ্যোগ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে কনটেইনার পরিবহনের জন্য মাত্র ২৮টি ট্রেন পেয়েছে বন্দর। এর আগে জানুয়ারি মাসে ৫৬টি ট্রেনে ২ হাজার ৬৯৮ একক কনটেইনার পরিবহন করা হয়।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, কনটেইনারের চাপ কমাতে প্রতিদিন তিনটি করে কনটেইনারবাহী ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা এখনো কার্যকর হয়নি। প্রতিটি ট্রেনে ৬২ একক কনটেইনার পরিবহন করা যায়। দিনে গড়ে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে ১২৪ একক কনটেইনার।

আমদানিকারকদের উদ্বেগ

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম বলেন, “বন্দরে কনটেইনার–জট পরিস্থিতি খুব খারাপ। ১৫-১৬ দিন অপেক্ষার পরও বন্দর থেকে কনটেইনার কমলাপুরে পাঠানো যাচ্ছে না।” তিনি সতর্ক করেন, “সামনে পবিত্র রমজান মাস। এসব কনটেইনারে রোজার পণ্য রয়েছে। এগুলো যদি সময়মতো সরবরাহ করা না যায়, তাহলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের জমে থাকা এবং পণ্যবাহী ট্রেনের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত সমাধান না হলে, এটি আমদানিকারকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো এবং কনটেইনার পরিবহনের কার্যক্রম দ্রুততর করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button