আঞ্চলিক

বগুড়ায় আজানের পর মসজিদে ঢুকে ইমামকে ছুরিকাঘাত, একজন আটক

বগুড়ার মালতীনগর এলাকায় জোহরের আজানের পরপরই এক ইমামকে ছুরিকাঘাত করে দুই যুবক। গুরুতর আহত ইমাম হাসপাতালে ভর্তি, এক হামলাকারী গণপিটুনির পর পুলিশের হেফাজতে। ঘটনার কারণ এখনো অস্পষ্ট, তদন্ত করছে পুলিশ।


ঘটনা সংক্ষেপ

বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকায় মাটির মসজিদে সোমবার (৩০ জুন) জোহরের আজানের পরপরই ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। হাফেজ আব্দুল মান্নান (৭৪) নামের প্রবীণ এক ইমামকে ছুরিকাঘাত করে দুই যুবক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

কী ঘটেছিল মালতীনগরে?

স্থানীয়রা জানান, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে দুইজন যুবক ব্যাগ হাতে মসজিদসংলগ্ন এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিল। জোহরের আজান শুরু হওয়ার পরপরই ইমাম হাফেজ আব্দুল মান্নান মসজিদের দিকে রওনা দেন। ঠিক তখনই ওই দুই যুবক তার ওপর হামলা চালায়।

এক যুবক ধারালো ছুরি ও সুচালু রড দিয়ে ইমাম মান্নানের শরীরে একাধিক আঘাত করে। আঘাতে কাতর ইমাম পড়ে যান মসজিদের পাশের ড্রেনে। স্থানীয় মুসল্লিরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

হামলাকারী সম্পর্কে তথ্য

হামলার শিকার হাফেজ আব্দুল মান্নান জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি মালতীনগর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মালতীনগরের ঐতিহ্যবাহী মাটির মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আটক যুবকের নাম দেলোয়ার হোসেন (৩০), তার বাড়ি ভাটকান্দী মধ্যপাড়ায়। স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, দেলোয়ার এলাকায় ভবঘুরে হিসেবে পরিচিত এবং তার মানসিক সমস্যা রয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। হামলার সময়ই স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয় এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করে।

পুলিশের অবস্থান ও তদন্ত অগ্রগতি

বগুড়া বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর ফরহাদ মন্ডল জানান, “আহতের অবস্থা এখনো গুরুতর। অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি, তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ উপ-পরিদর্শক মো. জাহিদ হাসান বলেন, “এই হামলার পেছনে পূর্বপরিকল্পনা ছিল কিনা, নাকি মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও মুসল্লিদের উদ্বেগ

মসজিদে হামলার ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মুসল্লিরা জানান, এমন পবিত্র স্থানে একজন প্রবীণ ইমামের ওপর হামলা কেবল দুঃখজনকই নয়, ভয়ানকও বটে। অনেকেই দাবি করেছেন, মসজিদ ও আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হোক এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

স্থানীয় এক মুসল্লি বলেন,
“একজন বৃদ্ধ ইমামের ওপর এমন বর্বর হামলা খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই এর পেছনে যারাই জড়িত, তারা যেন দ্রুত বিচারের মুখোমুখি হয়।”

ইমামের জীবনের আলো

হাফেজ আব্দুল মান্নান একজন শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় ব্যক্তি। এলাকায় তার ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল ব্যাপক। তিনি নীরবে মানুষকে ইসলামি শিক্ষা দিয়ে আসছিলেন বহু বছর ধরে। এমন একজন ইমামের ওপর হঠাৎ করে এমন হামলা যেন পুরো এলাকাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

এখনো প্রশ্নবিদ্ধ: কেন এই হামলা?

পুলিশ ও স্থানীয়দের কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেন এমন নৃশংস হামলা চালানো হলো। এখনো হামলার কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে তদন্ত চলমান রয়েছে। পুলিশের ধারণা, এটি হতে পারে ব্যক্তিগত শত্রুতা, মানসিক অসুস্থতা, বা অন্য কোনো দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনার অংশ।

অনিশ্চয়তার মাঝে অপেক্ষা

এই হামলার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, তবে প্রশাসন জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।

“তবে বিশ্লেষকদের মতে, এমন ঘটনায় জনসাধারণের আস্থা ও নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও ভাবনার জায়গা তৈরি করলো। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ জরুরি।”

এম আর এম – ০১১৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button