বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উত্থান
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, বিশেষ করে যখন চীনের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কমছে। বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি, তবে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এর প্রভাব স্পষ্ট। গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ১১১ কোটি ডলার কমেছে। এর বিপরীতে, ভিয়েতনামের ১১৯ কোটি ও বাংলাদেশের ৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
১. দেশের রপ্তানি খাতের বর্তমান অবস্থা
পোশাক খাতের পরেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় রপ্তানি উৎস। ২০১৪ সালে দেশের চামড়া রপ্তানি ছিল প্রায় ৩৯৭ মিলিয়ন ডলার; ২০২৪ সালে তা দাঁড়ায় মাত্র ১৪২.৫৪ মিলিয়ন ডলারে, যা প্রায় ৬৪% হ্রাস। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।
২. এলডব্লিউজি (LWG) সনদ ও তার প্রয়োজনীয়তা
Leather Working Group (LWG) হলো ত্বক ও চামড়া শিল্পে পরিবেশ ও দায়িত্বশীলতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই সনদ ছাড়া ইউরোপ, মার্কিন ও উন্নত বাজারে প্রবেশ করা কঠিন। বাংলাদেশের মাত্র ৭–৮ প্রতিষ্ঠানই LWG সনদ পেয়েছে; কিছু সূত্রে সংখ্যাটি আরও কম দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, মাত্র দুটি কোম্পানি বাংলাদেশে LWG সনদ অর্জন করেছে।
৩. সিইটিপি (CETP) ব্যর্থতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংকট
সাভারের ত্বক শিল্প পার্কে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (CETP) সম্পূর্ণ কার্যকর নয়। এটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় স্বচ্ছতা ও LWG সনদ অর্জনে। পরিবেশ, নিয়ম ও আন্তর্জাতিক বাজারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে CETP-এর কার্যকারিতা জরুরি।
LFMEAB (Leatherman’s Federation of Bangladesh) সভাপতি সাইদ নাসিম মঞ্জুর বলেন—“LWG ছাড়া, বিশ্ব বাজারে আমরা অদৃশ্য। সিইটিপি আপসহীন রপ্তানি দ্বিগুণ করতে পারি না।”
৪. আর্থিক ও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ
BTA (Bangladesh Tanners Association) ও গবেষকদের মতে, প্রতিটি ট্যানারিতে LWG সনদ অর্জনের জন্য ৬৭,৪০১ থেকে ৮৭,২২৬ ডলার (১০ বছরের ব্যয়ে) বিনিয়োগ প্রয়োজন। অধিকন্তু, অনেক কারখানার পক্ষে নিজস্ব ইটিপির জায়গা ও তহবিলের অভাবে এটি হতে পারছে না।
৫. বিপর্যয়ের ফলাফল: মূল্য হ্রাস ও চীননির্ভরতা
LWG সনদ না থাকায় চামড়া বিদেশে পাঠাতে গিয়ে বাংলাদেশ ট্যানারিরা প্রিমিয়াম মূল্য পাচ্ছে না; বরং চীনের দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, যেখানে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম প্রায় ৫০–৭০ সেন্ট! অন্যদিকে সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলো ১.৫ ডলার বা তার বেশি দামে বিক্রি করতে পারছে।
৬. সরকার ও শিল্প নেতাদের পরামর্শ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় সাভারের ইটিপি সক্ষমতা বাড়াতে বৈধ উদ্যোগ নিতে বলেছেন। DCCI (Dhaka Chamber of Commerce and Industry)-তে মঞ্জুর বলেন, “আন্তর্জাতিক স্বীকৃত CETP পরিচালকদের নিয়োগ, গ্রিন ফাইন্যান্স, ট্যানারিদের অডিট খরচ সহায়তা—এই পদক্ষেপগুলো জরুরি।”
TBS (The Business Standard)-এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০–২৫টি LWG-সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দ্রুত প্রয়োজন, সরকারের আর্থিক ও নীতি-সহায়তা ছাড়া এ ধাপে উত্তরণ কঠিন। সরকারি অবকাঠামো ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাব, এবং CETP-ভিত্তিক নীতি গ্রহণ দায়-সম্পন্নভাবে দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের চামড়া খাত একদিকে রয়েছে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি সম্ভাবনা, অপরদিকে পরিবেশ সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ—বিশেষ করে LWG সনদ ও CETP-এর কার্যকর বাস্তবায়নে। সরকার, শিল্প নেতা ও ট্যানারিদের যৌথ প্রয়াস ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন অসম্ভব। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পুনরায় আন্তর্জাতিক বাজার দখল সম্ভব।
MAH – 12174 , Signalbd.com



