রোনালদোর জোড়া গোলে পর্তুগালের দুর্দান্ত জয়

পর্তুগাল জাতীয় ফুটবল দল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে শক্তিশালী আক্রমণভঙ্গিতে নিজেদের স্থানকে আরও দৃঢ় করেছে। আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামেই পর্তুগাল এক দাপুটে ৫-০ গোলের জয় অর্জন করেছে। এই জয়ে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ গোল করে দর্শক ও ফুটবল সমালোচকদের মন জয় করেছেন ফুটবল মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, এছাড়াও জোাও ফেলিক্সের দারুণ পারফরম্যান্সে পর্তুগালকে আর্মেনিয়ার মাঠে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ম্যাচটি শুরু হওয়ার মাত্র ১০ মিনিটে পর্তুগাল প্রথম গোলটি নিশ্চিত করে। জোাও ফেলিক্সের চমৎকার প্লে এবং সঠিক ফিনিশিং পর্তুগালকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যায়। দর্শকরা যেন হঠাৎই উত্তেজনার ঢেউয়ে ভেসে যায়। প্রথম গোলটি ছিল মাত্র শুরু; এরপর ২১ মিনিটে নিজস্ব দক্ষতার প্রদর্শনী দিয়ে রোনালদো দ্বিগুণ করেন ব্যবধান। পেদ্রো নেতোর নিখুঁত পাস রোনালদোর কাছে পৌঁছালে তিনি তার ক্যারিয়ারের ১৪০তম আন্তর্জাতিক গোল সম্পন্ন করেন। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী রোনালদোর এই মুহূর্তটি তার সতীর্থ ও ফুটবলপ্রেমীদের জন্য উদযাপন একটি আবেগঘন স্মৃতি হয়ে দাঁড়ায়।
যিনি পর্তুগিজ ফুটবলের ইতিহাসে
রোনালদোর গোল উদযাপনে দেখা যায়, তিনি প্রয়াত সতীর্থ জোটার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জোটা, যিনি পর্তুগিজ ফুটবলের ইতিহাসে অম্লান ছাপ রেখেছিলেন, তার স্মৃতিকে রোনালদো কৃতজ্ঞতার সঙ্গে শ্রদ্ধা জানান। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে, ম্যাচের ৩২ মিনিটে জোাও ক্যান্সেলো বক্সের ভিতর থেকে একটি দুর্দান্ত শট মারেন, যা আর্মেনিয়ার জালে প্রবেশ করে। ফলে বিরতিতে প্রথমার্ধ শেষে পর্তুগাল ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকে। ক্যান্সেলোও গোলের পর রোনালদোর ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশনে অংশ নেন, যা পর্তুগালের খেলোয়াড়দের মধ্যে এক অনন্য উৎসাহ সঞ্চার করে।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই পর্তুগাল দলের আক্রমণাত্মক ফুটবল দর্শকদের মুগ্ধ করে। ম্যাচের ৪৬ মিনিটে, রোনালদো আবারও তার দক্ষতা দেখান এবং নিজের দ্বিতীয় গোল নিশ্চিত করেন। ৬১ মিনিটে ফের জোাও ফেলিক্স আক্রমণে নামেন এবং দলের পঞ্চম গোলটি করেন। এভাবে, ম্যাচ শেষ হয় ৫-০ গোলের দাপুটে জয় নিয়ে।
এই জয়ের মাধ্যমে পর্তুগাল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজের অবস্থান শক্ত করে। কোচ ফার্নান্দো সান্তোস ম্যাচ শেষে বলেন, “আমরা খেলায় ধারাবাহিকতা দেখিয়েছি, খেলোয়াড়রা পুরোপুরি মনোযোগী ছিল। বিশেষত রোনালদো ও ফেলিক্সের পারফরম্যান্স দলের জন্য অনুপ্রেরণামূলক। আমরা আশা করি এই ধারাবাহিকতা বিশ্বকাপে আমাদের সাফল্য এনে দেবে।”
রোনালদো ও ফেলিক্সের চমক
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আবারও প্রমাণ করেছেন কেন তিনি বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ১৪০তম গোলের পর, তিনি বলেন, “ফুটবল শুধুই একটি খেলা নয়, এটি আবেগের প্রকাশ। জোটার স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গোল উদযাপন করাটা আমার জন্য বিশেষ। দলগত সাফল্যই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
জোাও ফেলিক্সের পারফরম্যান্সও ছিল দৃষ্টিনন্দন। প্রথম গোলটি নিশ্চিত করা এবং শেষ পর্যন্ত দলের পঞ্চম গোলের সঙ্গে জড়িত থাকা তাকে পর্তুগালের আক্রমণাত্মক দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পর্তুগালের বিশ্বকাপ বাছাই মিশনের গুরুত্ব
২০২৬ সালের বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে এই জয় পর্তুগালের জন্য বড় একটি আত্মবিশ্বাসের বিষয়। গ্রুপ পর্যায়ের প্রতিটি ম্যাচে শক্তিশালী ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে। আর্মেনিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে এত বড় ব্যবধানের জয় পর্তুগালের পরিকল্পনা ও কৌশলের দক্ষতা প্রতিফলিত করে।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পর্তুগালকে আরও কয়েকটি কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে। ইতিমধ্যেই পর্তুগালের দল নিজেদের প্রস্তুতি, অভিজ্ঞতা এবং নতুন তারকা খেলোয়াড়দের যোগফলকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
পর্তুগাল ফুটবল প্রেমীদের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পর্তুগাল ফুটবল প্রেমীরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। রোনালদো এবং ফেলিক্সকে বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে ফুটবল বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, “এই জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে এবং বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে।”
পরবর্তী ম্যাচের প্রস্তুতি
পর্তুগাল এখন তাদের পরবর্তী ম্যাচের দিকে মনোনিবেশ করবে। কোচ ফার্নান্দো সান্তোস বলেছেন, “আমরা বিশ্রামের পর আবার মাঠে নামব এবং একই উত্সাহ, একই মনোযোগ নিয়ে খেলব। প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।”
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে পর্তুগালের শক্তিশালী শুরুর পর আশা করা যাচ্ছে, তারা গ্রুপে শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপে সরাসরি যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্য পূরণ করবে।
MAH – 12669, Signalbd.com