ফুটবল

চেলসি জয়ী হয়ে আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়নশিপের থেকে দ্বিগুণ অর্থ পুরস্কার পেল

Advertisement

বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম প্রতিযোগিতা ক্লাব বিশ্বকাপ এবার নতুন রেকর্ড গড়লো। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা যখন মেসি, দি মারিয়া, মার্তিনেজদের নেতৃত্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়, তখন তাদের হাতে আসে প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের পুরস্কার। যা ছিল ঐ সময়ের প্রায় ৫১০ কোটি টাকার সমান। কিন্তু ২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ী ইংলিশ ক্লাব চেলসি পেয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ।

ক্লাব বিশ্বকাপের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়

প্রায় এক মাসের কঠিন লড়াই ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের পর চেলসি ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে বিশ্ব ফুটবলে এক নতুন ইতিহাস রচনা করলো। ফাইনালে ফেভারিট ফরাসি ক্লাব পিএসজিকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে তারা অর্জন করেছে এই সম্মান। শুধু ট্রফি নয়, বিপুল অর্থ পুরস্কারও তাদের হয়েছে যা আন্তর্জাতিক ফুটবলের নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

চেলসির আয়: আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের থেকে বেশি

ফিফা ঘোষণা করেছে, ক্লাব বিশ্বকাপের মোট অর্থ পুরস্কার ১ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার সমান। এর মধ্যে চেলসি এককভাবে পেয়েছে ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। তুলনামূলকভাবে, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনার ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের পুরস্কারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।

তাদের আয়ের মধ্যে রয়েছে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার এবং পারফরম্যান্স পুরস্কার হিসেবে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। শুধু ফাইনাল জয়েই তাদের হাতে এসেছে প্রায় ৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ, শুধু এক ম্যাচেই তাদের আয় আর্জেন্টিনার পুরো বিশ্বকাপ পুরস্কারের সমান।

পিএসজি এবং অন্যান্য দলের আয়

ফাইনালে হারা পিএসজিও আড়াই কোটি ডলারের বেশি অর্থ পেয়েছে। তারা পেয়েছে ১০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার সমান। এ অর্থ আয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার পুরস্কারের দ্বিগুণের থেকেও বেশি।

তৃতীয় স্থান অধিকারী স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ পেয়েছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৯১ কোটি টাকা), আর চতুর্থ স্থানে থাকা ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্স পেয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা প্রায় ৮২৭ কোটি টাকার সমান।

ক্লাব বিশ্বকাপ: ফুটবলের নতুন অর্থনৈতিক মানদণ্ড

গত কয়েক বছরে ক্লাব ফুটবলের জনপ্রিয়তা এবং অর্থায়ন এমনভাবে বেড়েছে যা ফুটবল বিশ্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ক্লাব বিশ্বকাপের এই বিশাল অর্থ পুরস্কার প্রমাণ করে যে ক্লাব পর্যায়ের ফুটবল এখন জাতীয় দল পর্যায়ের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ও লাভজনক।

বিশ্বকাপের মতো জাতীয় দল ভিত্তিক টুর্নামেন্টের তুলনায় ক্লাব বিশ্বকাপ এখন অনেক বেশি অর্থনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে। বড় বড় ক্লাবগুলোর বিশ্বজনীন ভক্তসংখ্যা, ব্র্যান্ডিং, স্পন্সরশিপ ও টেলিভিশন লাইসেন্স থেকে এই আয় অর্জিত হচ্ছে।

চেলসির জয় উদযাপন

চেলসির খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে ট্রফি হাতে নিয়ে নিজেদের জয়ের আনন্দ উদযাপন করেছে। দলটির উদ্যম ও নিষ্ঠার প্রশংসায় অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব ফুটবলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী।

ভবিষ্যতে ক্লাব বিশ্বকাপের প্রভাব

এই টুর্নামেন্টের আকার, অংশগ্রহণকারী দল ও অর্থ পুরস্কারের বৃদ্ধির ফলে আগামী দিনে ক্লাব ফুটবল আরও জনপ্রিয়তা পাবে। বিশেষ করে ইউরোপের শক্তিশালী ক্লাবগুলোর জন্য এটি হবে আয় এবং সম্মানের অন্যতম উৎস।

এছাড়াও, দক্ষিণ আমেরিকার এবং এশিয়ার ক্লাবগুলোও ভবিষ্যতে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফিফার পরিকল্পনা আছে ক্লাব বিশ্বকাপকে আরও বড় মঞ্চে রূপান্তরিত করার, যেখানে বিভিন্ন মহাদেশের শ্রেষ্ঠ ক্লাবরা একসঙ্গে লড়াই করবে।

সার্বিক পর্যালোচনা

চেলসির এই জয়ের মাধ্যমে ফুটবল বিশ্বের আর্থিক মানদণ্ড পরিবর্তিত হয়েছে। ক্লাব বিশ্বকাপ এখন শুধু খেলার ক্ষেত্র নয়, একটি বিশাল অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্মেও পরিণত হয়েছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী দল থেকে শুরু করে পিএসজি, রিয়াল মাদ্রিদ এবং অন্যান্য ক্লাব পর্যন্ত সবাই এই টুর্নামেন্টের আর্থিক প্রভাব অনুভব করছে।

ফুটবল প্রেমীদের জন্য এটি আনন্দের সংবাদ, কারণ প্রতিটি ম্যাচ এখন আরও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হবে, আর ক্লাবের প্রতিযোগিতার মান আরও উন্নত হবে। এভাবে ক্লাব ফুটবল বিশ্বকাপ ফুটবলের বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা ও আর্থিক সম্ভাবনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button