অনিল আম্বানির দেশত্যাগ বন্ধের জন্য ‘লুক আউট’ নোটিশ জারি
ভারতের বিশিষ্ট শিল্পপতি অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে বড় ধরনের ঋণ ও জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে দেশত্যাগ ঠেকাতে ‘লুক আউট’ নোটিশ জারি করা হয়েছে। এই নোটিশ দেশের সব বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং অন্যান্য সীমান্তে পাঠানো হয়েছে, যাতে তিনি বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন।
অনিল আম্বানি বর্তমানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছেন, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে তিন হাজার কোটি রুপি ঋণ প্রতারণার অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন।
ইডি-র তদন্তের মূল বিষয়: ৩ হাজার কোটি রুপি ঋণ প্রতারণার অভিযোগ
রিলায়েন্স গ্রুপের সভাপতি অনিল আম্বানির বিভিন্ন সংস্থা দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে মোট ৩১,৫৮০ কোটি রুপি ঋণ নিয়েছিল। তবে, ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে ওই টাকা মূলত নানা কৌশলে অন্য সংস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিশেষ করে ইয়েস ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের মধ্যে তিন হাজার কোটি রুপি অনিল আম্বানির বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ হিসেবে রয়েছে, যার এক বড় অংশ ‘প্রমোটারদের’ নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইডি মনে করছে এই টাকা ঘুষ এবং প্রতারণার মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে।
আরকমের ঋণ ‘প্রতারক’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্টেট ব্যাংক
দেনাগ্রস্ত রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স (আরকম) এর ঋণ অ্যাকাউন্ট ‘প্রতারক’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। ইতিমধ্যেই এসবিআই রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সকে এই বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এবং শেয়ারবাজারকেও এ ব্যাপারে অবহিত করেছে।
এর ফলে অনিল আম্বানির ব্যবসায়িক জীবনে নতুন এক সংকট দেখা দিয়েছে, যেটি তার আর্থিক ভবিষ্যতকে আরো অনিশ্চিত করে তুলেছে।
অনিল আম্বানির দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক ঝামেলা ও আইনি জটিলতা
অনিল আম্বানির ব্যবসায়িক জীবনে দীর্ঘদিন ধরেই নানা ঝামেলা চলছে। ২০১৯ সালে এরিকসন মামলায় ৪৫৮ কোটি রুপি জরিমানা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ঐ সময় তাঁকে গ্রেপ্তার হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন বড় ভাই মুকেশ আম্বানি।
এই মামলায় তিনি নিয়মিত আইনি চাপে রয়েছেন। এরপর থেকে আর্থিক অনিয়ম এবং ঋণ প্রতারণার অভিযোগে তদন্ত আরও জোরদার হয়েছে।
ইয়েস ব্যাংকের ঋণ মঞ্জুরির ব্যাপারে শর্ত ভঙ্গ ও অনিয়ম
ইডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইয়েস ব্যাংক ঋণ মঞ্জুরির সময় বহু নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। ঋণের শর্ত ভঙ্গ এবং অনিয়মের মাধ্যমে ঋণের অর্থ বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী সংস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছে।
ইডির মতে, এই টাকা ঘুষের আড়ালে লেনদেন করা হয়েছে, যা একটি বড় জালিয়াতির অংশ।
বিদেশে সম্পত্তি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য তদন্তাধীন
ইডি তদন্তের আওতায় রয়েছে অনিল আম্বানির বিদেশে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সম্পত্তি। এই তথ্য সংগ্রহ করে তাকে দেশের আইন অনুযায়ী দায়িত্বহীন ঋণ গ্রহণ ও অর্থপাচারের অভিযোগে সুরাহা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তাঁর বিদেশি সম্পত্তি এবং লেনদেনের হিসেব নিরীক্ষা করে বড় ধরনের অর্থ পাচার ও জালিয়াতির প্রমাণ খুঁজে বের করতে চেষ্টা চলছে।
লুক আউট নোটিশ জারির কারণ এবং তার প্রভাব
অনিল আম্বানিকে গত মঙ্গলবার ইডি অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় তাঁকে আটক করার জন্য ‘লুক আউট’ নোটিশ জারি করা হয়েছে। আগামী ৫ আগস্ট তাঁকে পুনরায় জেরা করার জন্য ডাকাও হয়েছে।
এই নোটিশের ফলে অনিলের দেশত্যাগে বাধা সৃষ্টি হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
ভারতের ব্যবসায়িক জগত ও অর্থনীতিতে প্রভাব
অনিল আম্বানির এই অর্থনৈতিক সংকট ভারতের বৃহৎ ব্যবসায়িক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রিলায়েন্স গ্রুপ দেশের অন্যতম প্রধান সংস্থা হলেও এই ঋণ প্রতারণার অভিযোগের ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রভাবক ব্যবসায়ীদের উপর কঠোর নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আইনি ধারা
বর্তমানে ইডি এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে ব্যস্ত। তাঁর বিদেশি সম্পত্তি জব্দ এবং ঋণ পরিশোধের জন্য বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি অর্থপাচার বা ঋণ প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত, তাহলে তাঁকে দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাবাস ও অর্থদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
সংক্ষেপে, কী জানালেন সূত্র?
- অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে ঋণ প্রতারণার অভিযোগ, ঋণের পরিমাণ তিন হাজার কোটি রুপির কাছাকাছি।
- ‘লুক আউট’ নোটিশ জারি করে তাঁকে দেশের বাইরে যাওয়া থেকে আটকানো হয়েছে।
- ইডি’র তত্ত্বাবধানে বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সম্পত্তি তদন্তাধীন।
- স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ঋণ অ্যাকাউন্ট ‘প্রতারক’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে।
- দীর্ঘদিন ধরেই অনিলের ব্যবসায়িক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে।
- আগামী ৫ আগস্ট তাঁকে পুনরায় হাজির হতে বলা হয়েছে।
ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পপতি অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে ঋণ ও অর্থ পাচারের এই ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নয়, পুরো দেশের অর্থনীতির নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলে।
সরকার ও তদন্ত সংস্থা কঠোর অবস্থানে থেকে এই প্রকার অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে। আগামী দিনে এই মামলা দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ ও নীতি প্রণয়নে নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
MAH – 12092 , Signalbd.com



