বিশ্ব

শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযান ঠেকাতে মেয়রের কঠোর নির্দেশনা

Advertisement

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে শুরু করে শিকাগো পর্যন্ত উত্তেজনা বাড়ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতি নিয়ে। শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন খোলাখুলিভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন এবং সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছেন।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা: সেনা মোতায়েন ও অভিবাসন অভিযান

ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন ডিসিতে ইতোমধ্যেই প্রায় দুই হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, একই ধরনের সেনা মোতায়েন শিকাগোসহ অন্যান্য বড় শহরেও করা হতে পারে, যেখানে অপরাধ এবং অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

ট্রাম্প বারবার শিকাগোকে “অরাজক শহর” (Anarchist City) বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং শহরের অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, শিকাগো এখন “একটি হত্যার ক্ষেত্র” (Killing Field) এ পরিণত হয়েছে।

শিকাগো মেয়রের নির্দেশনা: অসাংবিধানিক পদক্ষেপের বিরোধিতা

শিকাগোর ডেমোক্র্যাট মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন প্রেসিডেন্টের এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন—

“আমাদের শহরে কোনো ধরনের অসাংবিধানিক ও বেআইনি সামরিক দখলদারির প্রয়োজন নেই। শিকাগো এমন কোনো পদক্ষেপ মেনে নেবে না।”

মেয়র জনসন শহরের বিভিন্ন দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন সম্ভাব্য অভিবাসন অভিযান বা সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে এবং স্থানীয় নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করতে হবে, তা স্পষ্টভাবে মেনে চলতে।

স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা কী হবে?

জনসন পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, শিকাগোর স্থানীয় পুলিশ ফেডারেল বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কোনো টহল বা অভিযান চালাবে না। তিনি আরও বলেন,

“শহরের আইন অনুযায়ী, ফেডারেল অভিযানের সময় শিকাগো পুলিশ স্থানীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষণে অগ্রাধিকার দেবে।”

এছাড়াও নির্দেশনায় কিছু বিদ্যমান নগরনীতির পুনঃস্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে

  • পুলিশ সদস্যদের বডিক্যাম ও পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামূলক
  • জনসমাগমে মুখোশ (mask) ব্যবহার না করার নির্দেশ।

শহরজুড়ে সচেতনতা বাড়ানো হবে

শিকাগো কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের জন্য অধিকার বিষয়ক সচেতনতা ক্যাম্পেইন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। যাতে ফেডারেল অভিযানের সময় তারা নিজেদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক এড়ানো যায়।

কেন বাড়ছে এই উত্তেজনা? অভিবাসন সংকটের পটভূমি

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি সবসময় রাজনৈতিক ইস্যুর কেন্দ্রে থাকে। ২০২৫ সালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। শিকাগোর সরকারি তথ্য অনুযায়ী—

  • শহরের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন অভিবাসী
  • এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা
  • কতজনের কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই, তা নিশ্চিত নয়, তবে অনুমান করা হচ্ছে সংখ্যা কয়েক লাখ।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি—অভিবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ অপরাধে জড়িত এবং তারা স্থানীয় অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ট্রাম্প রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে অভিবাসীদের টার্গেট করছেন

রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি বক্তব্য: হোয়াইট হাউস বনাম শিকাগো

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন শিকাগোর মেয়রের নির্দেশনাকে “প্রচারের নাটক” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন—

“ডেমোক্র্যাট নেতারা যদি প্রেসিডেন্টকে সমালোচনা করার পরিবর্তে নিজেদের শহরে অপরাধ দমনে মনোযোগ দিতেন, তবে তাঁদের কমিউনিটি অনেক নিরাপদ থাকত।”

অন্যদিকে, ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জে বি প্রিৎজকার, যিনি একজন ডেমোক্র্যাট, ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলেছেন। তাঁর ভাষায়—

“ডোনাল্ড ট্রাম্প সংকট তৈরি করছেন, সেনাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন এবং কর্মজীবী পরিবারগুলোর কষ্ট আড়াল করার চেষ্টা করছেন।”

শিকাগোর বাস্তব চিত্র: অপরাধ ও অভিবাসন ইস্যু

শিকাগো যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। দীর্ঘদিন ধরে শহরটি অস্ত্র সহিংসতা ও অপরাধের জন্য সমালোচিত। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে—

  • গত বছরে অস্ত্র সহিংসতায় মৃত্যুর হার বেড়েছে ১২%
  • বেশিরভাগ অপরাধ গ্যাং-সম্পর্কিত

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, অভিবাসীরা এই অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি জটিল সামাজিক সমস্যা, যার সমাধান শুধু ফেডারেল অভিযান দিয়ে সম্ভব নয়।

অভিবাসনবিরোধী অভিযান: মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ

মানবাধিকার সংগঠনগুলো ফেডারেল অভিযানের নামে ব্যাপক গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছে। তাঁদের মতে, এ ধরনের অভিযান—

  • অভিবাসী পরিবারের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করবে
  • অবৈধ গ্রেপ্তার ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়াবে

আগামী দিনে কী হতে পারে?

ট্রাম্প প্রশাসন শিকাগোতে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা অস্বীকার করেনি। বরং ইঙ্গিত দিয়েছে,

“আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যা যা প্রয়োজন, সবকিছু করা হবে।”

তবে শিকাগোর মেয়র ও ইলিনয়ের গভর্নর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা এ ধরনের পদক্ষেপের আইনি চ্যালেঞ্জ জানাবেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যু আগামী মার্কিন নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নেবে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় শিবিরই এটিকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে

MAH – 12573,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button