ফুটবল

২৩ সদস্যের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন

এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে অংশ নিতে আজ রাতেই মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। কঠিন পরীক্ষার আগে দলের কোচ পিটার বাটলার মূলত রক্ষণে শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন। এই স্কোয়াডে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে জানানো হয়েছে।

বড় পরিবর্তন রক্ষণে, বাদ পড়ল দুই গোলকিপার ও একজন মিডফিল্ডার

আগের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন দুই গোলরক্ষক মেঘলা রানী ও ফেরদৌসী আক্তার এবং মিডফিল্ডার শান্তি মার্ডি। পরিবর্তে দলে ডাক পেয়েছেন গোলকিপার মিলি আক্তার, স্বর্ণা রানী এবং ডিফেন্ডার নিলুফা ইয়াসমিন। কোচ বাটলার মূলত মাঝমাঠ থেকে একজন কমিয়ে রক্ষণভাগ আরও মজবুত করতে চান, তাই নিলুফার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মিলি আক্তার গত ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলেন, কিন্তু এরপর জর্ডান সফরে যেতে পারেননি। অন্যদিকে স্বর্ণা রানী ২০২২ সালের এশিয়ান গেমসে জাতীয় দলে ছিলেন এবং মাটিতে নামার অভিজ্ঞতা আছে। নিলুফা ইয়াসমিন গত বছরের অক্টোবরে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ দলে ছিলেন, তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। দীর্ঘদিন পর মিয়ানমার সফরে তিনি আবার দলে ফিরেছেন।

অনুশীলনে নারী ফুটবলাররা প্রস্তুত, প্রত্যাশা উজ্জ্বল

গত মে মাসে জর্ডানে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ড্র করে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঞ্চয় করেছে। সেখানকার ২৩ সদস্যের স্কোয়াড থেকে ২০ জন মিয়ানমারে যাচ্ছেন। নারীরা এখনো কঠোর অনুশীলন করছে, যাতে বাছাইপর্বে ভালো ফলাফল করতে পারে।

এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব: মিয়ানমার ‘সি’ গ্রুপের চ্যালেঞ্জ

২৩ জুন শুরু হওয়া এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ‘সি’ গ্রুপে আছে মিয়ানমার, বাহরাইন এবং তুর্কমেনিস্তান।

  • ২৯ জুন: প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে বাহরাইনের সঙ্গে
  • ২ জুলাই: দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক মিয়ানমারের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ
  • ৫ জুলাই: গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ

এই প্রতিযোগিতায় গ্রুপের সেরা দলগুলো আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২১তম এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার টিকিট পাবে। মোট ১২ দল এই আসরে অংশ নেবে। আয়োজক অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়ন চীন, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া এবং তৃতীয় স্থানে থাকা জাপানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গুরুত্ব

আগামী বছরের এশিয়ান কাপ নারীদের ফুটবলের বড় মঞ্চ। সেখানে ভালো করতে পারলে বিশ্বফুটবলের দিকে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য এটি আত্মপ্রকাশের সুযোগ, যেখানে কাঁপিয়ে দিতে হবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষদের।

বাংলাদেশের নারী ফুটবল: উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশ নারী ফুটবল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ এবং ভালো পারফরম্যান্সে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক প্রশংসা অর্জন করেছে। এশিয়ান কাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ তাদের জন্য ক্যারিয়ার গড়ার বড় মঞ্চ। এই বাছাইপর্বে ভালো ফলাফল হলে ভবিষ্যতে আরো বড় বড় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের সুযোগ বাড়বে।

ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোচ পিটার বাটলারের রক্ষণভাগে নতুন শক্তি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত যথাযথ এবং বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে এটি এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। গোলকিপার ও ডিফেন্ডারের গুরুত্ব বাছাইপর্বে অপরিসীম। মিয়ানমার ও বাহরাইন দলের মতো প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে রক্ষণভাগে সুরক্ষিত থাকা দলকে জয় এনে দিতে পারে।

আগামী দিনের প্রতিযোগিতা ও দৃষ্টিভঙ্গি

এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভালো করার পাশাপাশি, বাংলাদেশ দল আগামী কয়েক বছরে আরও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ বাড়াতে আগ্রহী। নারী ফুটবলের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, সুবিধা ও আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতা সংগ্রহই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। বাছাইপর্বে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দিক থেকে এই সফর হবে তাদের জন্য বড় পরীক্ষার মতো।

সার্বিকভাবে, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল মিয়ানমারে কঠিন পরীক্ষায় যাচ্ছে, যেখানে রক্ষণভাগে শক্তি বাড়ানো হয়েছে এবং নতুন মুখের মাধ্যমে দলকে আরও গতিশীল করা হয়েছে। এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের মেয়েদের লড়াই হবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়। প্রত্যাশার শেষ নেই, সাফল্যের দিশায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button