ফুটবল

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৬ বিশ্বকাপে ইরান কি খেলতে পারবে

এশিয়া মহাদেশ থেকে গত মাসেই ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ইরান। এই বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। তবে বিশ্বকাপের মোট ১০৪টি ম্যাচের মধ্যে সেমিফাইনাল, ফাইনালসহ সিংহভাগ ম্যাচ (৭৮টি) অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রেই। সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক সংঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এবং এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, ২০২৬ বিশ্বকাপে ইরান খেলার সুযোগ পাবে নাকি তাদের নিষিদ্ধ করা হবে?

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত এবং ফিফার ভূমিকা

চলতি মাসে ইরান ও ইসরায়েলের সামরিক সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৬ বিশ্বকাপে ইরানের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজনে ফিফার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কও বেশ ভালো বলে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের আগে থেকেই ইনফান্তিনোকে ট্রাম্পের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় বৈঠক করতে দেখা গেছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর ধারণা, ইরানে সামরিক হামলার পরও ইনফান্তিনোর কূটনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন এবং সেখানে খেলার পথে বাধা দেবে না। তবে ইনফান্তিনোর ওপর ট্রাম্পের যে প্রভাব, তাতে ২০২৬ বিশ্বকাপে ইরান নিষিদ্ধ হলেও হতে পারে। এই বিষয়টি সময় হলেই জানা যাবে। তবে এখন অন্তত এটুকু বলাই যায়, সংঘাতে জড়ানোয় ইরানের টানা চতুর্থ বিশ্বকাপে খেলা ঝুঁকিতে পড়েছে।

ফিফার নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস

ইতিহাস বলে, যুদ্ধের সংঘাতে জড়ানো দেশকে এর আগে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। ২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোয় রাশিয়াকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা ও উয়েফা। এছাড়া নব্বইয়ের দশকে বলকান যুদ্ধের কারণে সাবেক যুগোস্লাভিয়াকে নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। এই প্রেক্ষাপটে ইরানের ক্ষেত্রেও এমন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং বিকল্প পরিকল্পনা

২০২৬ বিশ্বকাপ সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইরানকে নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে ইরান যদি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগও পায়, তাদের সমর্থকেরাও সম্ভবত নিজ দলের ম্যাচ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না। ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় লাল তালিকাভুক্ত ১১টি দেশের মধ্যে ইরান অন্যতম। গত মার্চে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে লাল তালিকাভুক্ত দেশের নাগরিককে কোনোভাবেই মার্কিন ভূখণ্ডে ঢুকতে দেবে না ট্রাম্প সরকার।

তবে ইরানের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের জন্য এই নিয়ম হয়তো শিথিল করা হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ইরানের ম্যাচ সে দেশের সমর্থকেরা দেখতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত মেলেনি। ২০২৬ বিশ্বকাপের অন্য দুটি আয়োজক দেশ মেক্সিকো ও কানাডার ইরানের ওপর কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নেই। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইরানকে ‘এ’ গ্রুপে রাখা হতে পারে। এই গ্রুপের সব কটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মেক্সিকোয়। তবে ৪৮ দলের গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে ইরান শেষ ৩২-এ উঠলে তখন জটিলতা তৈরি হতে পারে।

বিশ্বকাপে এর আগে ছয়বার খেলেছে ইরান। ১৯৭৮, ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে তারা। এবারের বিশ্বকাপ তাদের জন্য শুধু খেলার মাঠেই নয়, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button