বাংলাদেশ নারী ফুটবল: ছয় বছরে র্যাঙ্কিংয়ে নজিরবিহীন উন্নতি
ঢাকা, ১২ জুন ২০২৫ — বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল তাদের সাম্প্রতিক অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতির নতুন রেকর্ড গড়েছে। ফিফা (FIFA) কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। বর্তমানে তারা ১২৮ নম্বরে অবস্থান করছে, যা দেশের নারী ফুটবলের জন্য এক বিরাট সাফল্য।
জর্ডানে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে সফলতা
গত ২৬ মে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল অংশ নিয়েছিল জর্ডানে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। যেখানে তারা ইন্দোনেশিয়া এবং জর্ডান দলের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা উপহার দিয়েছে। বিশেষ করে ৩১ মে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ড্র এবং ৩ জুন হোস্ট দেশ জর্ডানের বিরুদ্ধে ২-২ গোলে ড্র বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল অর্জন।
এই দুই শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ড্র করার ফলে বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্টে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। ১০৯৯.৩৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ ধাপ উন্নতি করে ১২৮ নম্বরে উঠে এসেছে। এর আগে তারা ছিল ১৩৩ নম্বরে।
র্যাঙ্কিংয়ের বিস্তারিত: উত্থান-পতন ও ইতিহাস
২০১৯ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ছিল ১২৭ নম্বরে। এরপর ২০২২ সালে দলের অবস্থান সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়, ১৪৭ নম্বরে। তবে কঠোর পরিশ্রম ও ধারাবাহিক উন্নতির মাধ্যমে তারা আবার ফিরে এসেছে উন্নতির পথে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবল ইতিহাসে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ১০০ নম্বর, যা তারা ২০১৩ ও ২০১৭ সালে দু’বার অর্জন করেছিল। ছয় বছরের সঙ্কটে অবস্থান পতনের পর এবার আবারও তারা ছোঁয়াছে নতুন উচ্চতা।
র্যাঙ্কিংয়ে অন্যান্য দলের অবস্থান
বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দোনেশিয়া তাদের তুলনায় একটি ধাপ পিছিয়ে ৯৫ নম্বরে অবস্থান করছে। আর হোস্ট দেশ জর্ডান তাদের এক ধাপ পিছিয়ে ৭৫ নম্বরে।
নারী ফুটবলের শীর্ষস্থানীয় তিনটি দল – যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও জার্মানি – তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে, দ্বিতীয়ে স্পেন এবং তৃতীয় স্থানে জার্মানি। ব্রাজিল তাদের অবস্থান চার ধাপে উন্নীত করে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। আর্জেন্টিনা ৩২ নম্বরে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের এই উন্নতি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে যুব ও কিশোরী স্তরে ফুটবল প্রোগ্রাম বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও ভালো প্রতিভা আবিষ্কারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
ফুটবল ফেডারেশন অব বাংলাদেশের (BFF) পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোগও নারী ফুটবলের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে। প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দলের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
দেশের ক্রীড়া ও নারী উন্নয়নে গুরুত্ব
নারী ফুটবলের এই সাফল্য কেবল ক্রীড়ার ক্ষেত্রে নয়, বরং সমাজের নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। নারী খেলোয়াড়রা দেশের জন্য গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, যাঁরা সমাজের নানা বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছেন।
এটি যুব সমাজের জন্য প্রেরণার উৎস, বিশেষ করে ক্রীড়ার মাধ্যমে নারী সশক্তিকরণ ও সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। সরকারি ও বেসরকারি সকল স্তরে এ ধরনের উদ্যোগ বাড়ানো গেলে বাংলাদেশের নারী ফুটবল আরও বড় উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।
সমগ্র নিউজ সারাংশ
- বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ফিফার সর্বশেষ র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮ নম্বরে উঠে এসেছে।
- ২৬ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত জর্ডানে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে ভালো পারফরম্যান্স।
- ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের সঙ্গে ড্র করে রেটিং পয়েন্ট বৃদ্ধি।
- ২০১৯ সালের পর ছয় বছরে সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিং।
- শীর্ষ দলগুলোর অবস্থান অপরিবর্তিত, ব্রাজিল উন্নতি।
- নারী ফুটবলের উন্নয়নে সরকারের ও সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
কীভাবে বাংলাদেশ নারীদের ফুটবলে বিশ্বস্ত অবস্থান অর্জিত হলো?
বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল ধারাবাহিক কঠোর পরিশ্রম ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে। কোচ পিটার বাটলারের পরিকল্পনা ও দক্ষতার ফলেই বাংলাদেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে। তার নেতৃত্বে দল ইতিবাচক মনোভাব ও কৌশলগত খেলা প্রদর্শন করেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বেশি সুযোগ
ভবিষ্যতে আরও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ, উন্নত প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশ নারী ফুটবলকে আরও শক্তিশালী করবে। এর মাধ্যমে দল বিশ্বের শীর্ষ স্তরে নিজের স্থান নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সাম্প্রতিক সাফল্য ক্রীড়া জগতে নতুন আশা ও উজ্জীবন নিয়ে এসেছে। এই পথ ধরে দেশের মেয়েরা আরও উন্নতি করবে, এবং বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশ নামকে উজ্জ্বল করবে।
আপনি যদি ফুটবল ও ক্রীড়া সংক্রান্ত আরও খবর জানতে চান, তাহলে সিংগনালবিডি ডট কম (Singnalbd.com) এ আমাদের সঙ্গে থাকুন।
