ক্রিকেট

হঠাৎ কনকাশন বদলি নিয়মে পরিবর্তন: বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে কার্যকর

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কনকাশন বদলি নিয়মে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, যা ২০২৫ সালের জুন থেকে টেস্ট ক্রিকেটে এবং জুলাই থেকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে কার্যকর হবে। এই নতুন নিয়মের প্রথম প্রয়োগ হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজে।

কনকাশন বদলি নিয়মে কী পরিবর্তন আসছে?

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি দলকে ম্যাচ শুরুর আগে সম্ভাব্য পাঁচজন বদলি খেলোয়াড়ের তালিকা ম্যাচ রেফারির কাছে জমা দিতে হবে। এই তালিকায় একজন ব্যাটসম্যান, একজন উইকেটকিপার, একজন পেস বোলার, একজন স্পিনার এবং একজন অলরাউন্ডার অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

এই তালিকার বাইরে কোনো খেলোয়াড়কে কনকাশন বদলি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তবে যদি বদলি খেলোয়াড় নিজেও মাথায় আঘাত পান, সে ক্ষেত্রে ম্যাচ রেফারি তালিকার বাইরে থেকেও একজন ‘লাইক-ফর-লাইক’ খেলোয়াড়কে অনুমোদন দিতে পারবেন।

‘লাইক-ফর-লাইক’ বদলি: বিতর্ক ও সমালোচনা

‘লাইক-ফর-লাইক’ অর্থাৎ সমতুল্য বদলি খেলোয়াড়ের নিয়মটি ২০১৯ সালে চালু হয়। তবে এই নিয়ম নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে টি-টোয়েন্টি সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে। ভারতীয় অলরাউন্ডার শিবম দুবে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়লে, তার বদলি হিসেবে পেসার হর্ষিত রানাকে নামানো হয়। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি ‘লাইক-ফর-লাইক’ বদলি নয়।

ভারতীয় ক্রিকেটার শিবম দুবে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হলেও, হর্ষিত রানা মূলত পেস বোলার। এই পরিবর্তন নিয়ে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার বলেন, “এটি সমতুল্য বদলি নয়। আমরা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই।”

এই ঘটনার পর, আইসিসি নতুন নিয়মে বদলি খেলোয়াড়ের তালিকা পূর্বনির্ধারিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে ভবিষ্যতে এমন বিতর্ক এড়ানো যায়।

নতুন নিয়মের কার্যকারিতা

নতুন কনকাশন বদলি নিয়ম ১৭ জুন ২০২৫ থেকে টেস্ট ক্রিকেটে কার্যকর হবে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে গল টেস্ট দিয়ে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে এই নিয়ম যথাক্রমে ২ জুলাই ও ১০ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

তবে ১১ জুন ২০২৫-এ লর্ডসে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে (অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা) পুরনো নিয়মই বহাল থাকবে।

ওয়ানডেতে দুই নতুন বল ব্যবহারের নিয়মে পরিবর্তন

আইসিসি ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই নতুন বল ব্যবহারের নিয়মেও পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে প্রতি ইনিংসে দুই প্রান্ত থেকে দুটি নতুন বল ব্যবহার করা হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইনিংসের প্রথম ১ থেকে ৩৪ ওভার পর্যন্ত দুটি নতুন বল ব্যবহৃত হবে। কিন্তু ৩৫তম ওভার থেকে ৫০তম ওভার পর্যন্ত ফিল্ডিং দলকে এই দুই বলের মধ্যে একটি নির্বাচন করতে হবে, যেটি দিয়ে বাকি ওভারগুলো তারা করবে।

এ ছাড়া যেসব ওয়ানডে ম্যাচ ২৫ ওভার বা তার কমে হবে, সেই সব ম্যাচে প্রতি ইনিংসে একটি নতুন বলই ব্যবহার করা হবে।

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন এই নিয়মের সমালোচনা করে বলেন, “দুই নতুন বল ব্যবহারের নিয়মটি ভারতের স্পিন বোলিংয়ের প্রাধান্য কমানোর জন্যই আনা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই নিয়মের ফলে রিভার্স সুইং ও স্পিনারদের কার্যকারিতা কমে গেছে।”

অশ্বিনের মতে, এই পরিবর্তন ওয়ানডে ক্রিকেটের ভারসাম্য নষ্ট করেছে এবং ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ঝুঁকে গেছে। তিনি ২০২৭ সালের বিশ্বকাপের আগে এই নিয়ম পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

আইসিসির এই নতুন নিয়মগুলো ক্রিকেটের ন্যায়বিচার ও ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এই পরিবর্তনগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে এই নিয়মের প্রথম প্রয়োগ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button