ক্রিকেট নয়, বিসিবিতে চলছে নেতৃত্বের নাটক: তামিম ইকবালের তীব্র সমালোচনা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আবারো নেতৃত্ব পরিবর্তন ও প্রশাসনিক নাটকীয়তায় সরব। এমন সময়েই মুখ খুলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, বিসিবিতে এখন ক্রিকেট বাদে সবকিছু হচ্ছে। তাঁর মতে, বোর্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে দেশের ক্রিকেট তার আকর্ষণ হারাতে বসেছে।
এই মন্তব্য করেছেন তিনি পাকিস্তান সফরে ব্যক্তিগত কাজে অবস্থানকালে, যেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিসিবির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ফারুক সরিয়ে আমিনুলকে আনতে উদ্যোগ
গত কয়েকদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত পরিচালক হিসেবে বোর্ডে আসা ফারুককে পদত্যাগ করতে বলা হলেও তিনি তা না করায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন আরেক সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুল, যাঁর নাম এখন চূড়ান্ত বলেই বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
আজ বিকেলে বিসিবির বোর্ড সভা বসে, যেখানে আমিনুলের সভাপতি হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তামিমের বক্তব্য: “ক্রিকেটের চেয়ে রাজনীতিই বড় হয়ে উঠেছে”
জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলা ও নেতৃত্ব দেওয়া অভিজ্ঞতা থেকে তামিম ইকবাল বোর্ডের বর্তমান অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন:
“বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, এটা তো ক্রিকেটের বোর্ড। কিন্তু ক্রিকেট বাদে সবকিছু হচ্ছে। কে আসবে, কে যাবে, কে সভাপতি হবে, কে হবে না—এসব নিয়েই ব্যস্ত সবাই। অথচ ক্রিকেটকে ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে আসছে।”
তামিম আরও বলেন, “আমি কারা সভাপতি হবে না হবে, তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি শুধু একটাই অনুরোধ করব—যাঁরা দায়িত্বে আছেন বা ভবিষ্যতে আসবেন, তারা যেন অন্তত ক্রিকেটটা নিয়ে ভাবে। কারণ, এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট তার আকর্ষণ হারাচ্ছে।”
“কে সভাপতি হবে, সেটা অগুরুত্বপূর্ণ”—তামিমের স্পষ্ট বার্তা
তামিম মনে করেন, বর্তমানে বিসিবিতে যা চলছে, তা ক্রিকেটের উন্নয়নের চেয়ে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন:
“কে সভাপতি হবে, কাকে করা হবে, এগুলো অগুরুত্বপূর্ণ। বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো—বাংলাদেশ ক্রিকেট উন্নতির দিকে যাবে কীভাবে? কারো সেই চিন্তা নেই। আমরা খেলায় পিছিয়ে পড়ছি। অথচ সবাই ব্যস্ত বোর্ডের চেয়ার নিয়ে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা যদি আগে স্বীকার না করি যে আমরা ভুগছি, তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
বিদেশেও প্রতিচ্ছবি নেতিবাচক হতে পারে: উদ্বেগ তামিমের
বিসিবির অভ্যন্তরীণ নাটকীয়তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কি না, জানতে চাইলে তামিম বলেন:
“আমি মনে করি, দেশের বাইরে কে কী ভাবছে সেটা নিয়ে ভাবার সময় এখন না। আমাদের দেশে মানুষ কী ভাবছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষই এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ক্রিকেট নিয়ে।”
মাঠের পারফরম্যান্সেও বাংলাদেশ দল হতাশাজনক
এই মুহূর্তে মাঠের পারফরম্যান্সেও সন্তুষ্টির কিছু নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারার পর পাকিস্তান সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও হেরে গেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব বিভাগেই দুর্বলতা প্রকট।
তামিম বলেন, “শুধু মাঠেই নয়, পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটই একটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। উন্নতির আগে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে আমরা খারাপ করছি।”
সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনার ঘাটতি
তামিমের মতে, বোর্ডের মূল দায়িত্ব হওয়া উচিত ক্রিকেট উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি করা। কিন্তু সেখানে সবচেয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। তাঁর ভাষায়:
“প্রথমে স্বীকার করতে হবে আমরা ভুগছি। এরপর ভাবতে হবে কীভাবে এখান থেকে বেরিয়ে আসা যায়। কিন্তু আমরা সেটি না করে, অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আসলে ক্রিকেট নিয়ে কেউ চিন্তাই করছে না।”
বোর্ডের অস্থিরতা কি সমাধানযোগ্য?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দীর্ঘদিন ধরেই অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে আলোচনায়। একজন সভাপতি সরে গেলে আরেকজন আসেন, আবার তাঁকেও ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফল ভোগ করে মাঠের ক্রিকেট। খেলোয়াড়, সমর্থক, এমনকি স্পনসররাও হারাতে বসেছে আগ্রহ।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পেশাদার ও স্বচ্ছ পরিচালনা পর্ষদ ছাড়া ক্রিকেট উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিসিবিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং স্বচ্ছতার অভাবের কারণে তরুণ প্রতিভার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ভবিষ্যতের পথ কী হওয়া উচিত?
তামিমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা বোর্ডের নেতৃত্বে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও পেশাদার প্রশাসকের সমন্বয় চান। বিসিবিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাব নয়, বরং ক্রিকেটের স্বার্থে সিদ্ধান্ত হবে।
“আমি বলব, যারা আসবেন বা যারা দায়িত্বে আছেন, তারা যেন অন্তত একটা বিষয় বুঝেন—এটা ক্রিকেট বোর্ড। ক্রিকেটকে প্রাধান্য দেওয়া হোক। নয়তো এই খেলার প্রতি মানুষের ভালোবাসা এক সময় হারিয়ে যাবে।”