বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান দলে চমক পর চমক, জায়গা পেলেন ছক্কা-বিস্ফোরক

বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত এই স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে রেকর্ড গড়া ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান। অন্যদিকে, এই দলে নেই পাকিস্তানের তারকা ব্যাটার বাবর আজম, নির্ভরযোগ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং বোলিং আক্রমণের প্রধান অস্ত্র শাহিন শাহ আফ্রিদি। এই তিনজনের অনুপস্থিতি পাকিস্তান দলের এই স্কোয়াডে বড় চমক হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
ঘোষিত স্কোয়াডে একাধিক পরিবর্তন এনে পাকিস্তান তাদের টি-টোয়েন্টি দলের ভবিষ্যৎ কাঠামো গঠনের আভাস দিচ্ছে। নতুন কোচ মাইক হেসনের অধীনে এটি হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের প্রথম সিরিজ। সিরিজের সূচি এখনও প্রকাশ না হলেও জানা গেছে, সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে লাহোরে।
সিরিজ শুরুর আগেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাহিবজাদা ফারহান
দলে সুযোগ পাওয়া ২৯ বছর বয়সী ডানহাতি ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান গত কয়েক মাসে বিস্ফোরক ব্যাটিং পারফরম্যান্স দিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। যদিও তিনি একেবারেই নতুন মুখ নন—পাকিস্তানের হয়ে তিনি ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন এবং এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৯টি ম্যাচ। তবে জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি।
সাম্প্রতিক সময়ে ফারহান যেভাবে ব্যাটিং করছেন, তাতে তার ক্যারিয়ার যেন নবজন্ম পেয়েছে। গত মার্চে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ থেকেই শুরু হয় তার দুরন্ত ফর্মের গল্প। সেই টুর্নামেন্টে তিনি মাত্র ৭ ম্যাচে করেছেন ৬০৫ রান, যার মধ্যে ছিল ৩টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফ-সেঞ্চুরি। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, তিনি ওই ৭ ম্যাচে মেরেছেন ৪০টি ছক্কা, যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩টি।
টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে অনন্য রেকর্ড
ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে ফারহানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ৭২ বলে অপরাজিত ১৬২, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। সেই টুর্নামেন্টে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৮৯.৬৫ এবং ব্যাটিং গড় ছিল ১২১—যা এক কথায় অবিশ্বাস্য। ওই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল মাত্র ২৮২। অর্থাৎ, ফারহান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরারের চেয়ে ৩২৩ রান বেশি করেছেন, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্সের প্রমাণ।
শুধু তাই নয়, ওই পারফরম্যান্সের পর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পিএসএলে প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের ফর্মের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন ফারহান। এক মাসের ব্যবধানে ৯ ইনিংসে ৪টি সেঞ্চুরি করে তিনি এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ডেও নাম লেখান।
পিএসএলে ধারাবাহিকতায় নতুন উচ্চতা
পাকিস্তান সুপার লিগের এবারের আসরেও ফারহান ছিলেন সবার শীর্ষে। তিনি ১৫৪ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৯৪ রান, যা এখনও পর্যন্ত চলমান আসরের সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ম্যাচেও তিনি ৪১ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের প্লে-অফ নিশ্চিত করেন।
এমন দুর্দান্ত ফর্ম এবং পরিসংখ্যানই তাকে আবারও জাতীয় দলে সুযোগ এনে দিয়েছে। অনেকের মতে, এটি সময়ের দাবি ছিল, এবং ফারহান তার পারফরম্যান্স দিয়েই জাতীয় দলে নিজের জায়গা নিশ্চিত করেছেন।
তারকাহীন পাকিস্তান স্কোয়াডে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘোষিত পাকিস্তান দলটি তুলনামূলকভাবে তরুণ এবং পরীক্ষামূলক। গত নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলা বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়—শাহিন আফ্রিদি, ওমেইর বিন ইউসুফ, আবদুল সামাদ, আব্বাস আফ্রিদি, জাহানদাদ খান, মোহাম্মদ আলী, সুফিয়ান মুকিম ও উসমান খান—এই সিরিজে জায়গা পাননি।
বিশেষ করে আব্বাস আফ্রিদি, যিনি এবারের পিএসএলে সর্বোচ্চ ১৭টি উইকেট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন, তাকেও দলে রাখা হয়নি। বিষয়টি অনেকেই বিস্ময় হিসেবে দেখছেন। সম্ভবত কোচ মাইক হেসনের পরিকল্পনায় তরুণদের দিয়ে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পাকিস্তান স্কোয়াড (বাংলাদেশ সিরিজ)
- সালমান আগা (অধিনায়ক)
- শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক)
- আবরার আহমেদ
- ফাহিম আশরাফ
- ফখর জামান
- হারিস রউফ
- হাসান আলী
- হাসান নাওয়াজ
- হুসাইন তালাত
- খুশদিল শাহ
- মোহাম্মদ হারিস
- মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র
- মোহাম্মদ ইরফান খান
- নাসিম শাহ
- সাহিবজাদা ফারহান
- সাইম আইয়ুব
বাংলাদেশের জন্য সতর্ক সংকেত
সাহিবজাদা ফারহানের মতো একজন আগ্রাসী ব্যাটসম্যানকে পাকিস্তান স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হচ্ছে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আফ্রিদি-রিজওয়ান না থাকলেও ফখর জামান, হারিস রউফ, নাসিম শাহ, ওয়াসিম জুনিয়রদের নিয়ে গঠিত এই দলটি যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ। তরুণদের নিয়ে গড়া এই দল একদিকে যেমন ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি, অন্যদিকে তেমনি নিজেদের প্রমাণের বড় সুযোগও বটে।
এই ম্যাচ সিরিজ পাকিস্তানের ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দলের তরুণ খেলোয়াড়রা এই সিরিজে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে মরিয়া থাকবে। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি হতে যাচ্ছে এক জমজমাট টি-টোয়েন্টি সিরিজ।