
বিশ্বখ্যাত চীনা ব্যবসায়ী ও আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা নিজের জীবনের ব্যর্থতা ও সংগ্রামের গল্প শুনিয়ে বহু তরুণ উদ্যোক্তাকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। একসময় যে মানুষটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গণিতে মাত্র ১ পেয়েছিলেন, তিনিই পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম সফল ই-কমার্স সাম্রাজ্যের রূপকার।
গণিতে ১, তবুও হার মানেননি
জ্যাক মা এক সাক্ষাৎকারে অকপটে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গণিতে মাত্র ১ পেয়েছিলাম।”
তিনবার ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি অবশেষে ভর্তি হন হ্যাংঝোউ নরমাল ইউনিভার্সিটিতে—যেটিকে তখন “চতুর্থ শ্রেণির” বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করা হতো। তবুও তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের জীবনের ‘হার্ভার্ড’ বলে অভিহিত করেন।
তার কথায়, “আমি কখনো ভালো ছাত্র ছিলাম না। কিন্তু শেখার আগ্রহটা ছিল প্রবল।”
কর্মজীবনের শুরুটা ছিল প্রত্যাখ্যান আর অপমানে ভরা
জীবনে নানা সময় চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন জ্যাক মা। চীনে কেএফসিতে চাকরির আবেদন করেছিলেন ২৪ জনের মধ্যে, ২৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়, বাদ পড়েন একমাত্র তিনিই। এমনকি পুলিশের চাকরির জন্যও আবেদন করেছিলেন—সেখানেও ভাগ্যে জোটেনি সাফল্য।
এমন দুঃসময়ের মধ্যেও জ্যাক মা নিজের আত্মবিশ্বাস হারাননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, ব্যর্থতা একদিন তাকে শেখাবে কীভাবে সফল হতে হয়।
“যোগ্যতা” না থাকলেও সফল হওয়া সম্ভব
জ্যাক মা বলেন, “তরুণদের যেসব দক্ষতা থাকে, আমার সেসব কিছুই ছিল না। কেউ বলত, ‘তোমার কী আছে? তুমি তো অ্যাকাউন্টিং বোঝো না, ম্যানেজমেন্ট শেখোনি, এমনকি কম্পিউটারও বোঝো না।’”
তিনি এ কথা শুনেও পিছিয়ে যাননি। বরং বিশ্বাস করতেন, “যাদের প্রথাগত শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, তাদের পক্ষে উদ্যোক্তা হওয়াই সবচেয়ে সহজ।”
আলিবাবার যাত্রা: এক ঝুঁকির গল্প
১৯৯৯ সালে নিজের বাসায় বসেই ১৮ জন সহকর্মীকে নিয়ে শুরু করেন আলিবাবার যাত্রা। শুরুর সময় হাতে ছিল মাত্র ৫ লাখ আরএমবি। পরিকল্পনা ছিল—এই অর্থ দিয়ে অন্তত এক বছর ব্যবসা চালিয়ে দেখবেন। তবে অষ্টম মাসেই সব অর্থ শেষ হয়ে যায়।
তবে দমে যাননি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে গিয়ে ৩০ জন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রত্যেকেই তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তবুও হাল না ছেড়ে ফিরে এসে শুরু করেন পরিশ্রমের নতুন অধ্যায়।
স্বপ্ন নয়, বাস্তবতায় বিশ্বাস রাখতেন
অনেকেই মনে করেন, আলিবাবা এক স্বপ্নের বাস্তব রূপ। কিন্তু জ্যাক মা বলেন, “এটা ছিল না স্বপ্ন কিংবা কল্পনা, বরং একটি বিশ্বাস। আমরা ১৮ জন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম—আমরা বিশ্বাসে অটল থাকব।”
তার মতে, “স্বপ্ন থাকতে হবে ঠিকই, তবে কল্পনায় ডুবে গেলে চলবে না। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দরকার একনিষ্ঠতা, পরিশ্রম, আর সঠিক দল।”
তরুণদের জন্য বার্তা: হাল ছেড়ো না
জ্যাক মা বলেন, “অনেক মা-বাবা অভিযোগ করেন, তাদের সন্তানরা একেকদিন একেক স্বপ্ন দেখে। আমি বলি—এটাই তো স্বাভাবিক। অন্তত স্বপ্ন বদলাচ্ছে মানে সে ভাবছে, খুঁজছে। স্বপ্ন না থাকা বরং চিন্তার বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “স্বপ্ন পূরণে লড়াই করতে হবে। সঠিক মানুষদের পাশে রাখতে হবে। কারণ একা একা কিছু সম্ভব নয়।”
ব্যর্থতার গল্পই সফলতার শিক্ষা
জীবনে বারবার ব্যর্থ হওয়া, প্রত্যাখ্যাত হওয়া, নিজেকে অযোগ্য প্রমাণিত ভাবা—এসব কিছুই জ্যাক মা’র জীবনে বড় এক শিক্ষায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি যে ভুল করেছি, তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু আমি শিখেছি—প্রত্যেকটি ভুল একটি নতুন সম্ভাবনার দিক খুলে দেয়।”
গণিতে ১ পেয়েছিলাম, আজ আমি জ্যাক মা
জীবনের শুরুতে গণিতে ১ পাওয়া একজন মানুষও বিশ্বের অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হতে পারেন—এই সত্যই তুলে ধরেছেন জ্যাক মা।
তিনি প্রমাণ করেছেন, ব্যর্থতা কোনো অভিশাপ নয়, বরং তা এক ধরনের উপহার। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি আজ কোটি তরুণের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
এম আর এম – ০২৬৬, Signalbd.com