যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা সিটির সম্পূর্ণ দখলদারিত্বের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। এই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা। অনেকেই প্রকাশ্যে বলেছেন, তারা গাজা ছেড়ে যাবেন না, প্রয়োজনে এখানেই প্রাণ দেবেন।
গাজার বাসিন্দা রাজাব খাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি জোর করে গাজা ছাড়বেন না। তার ভাষায়, “ইসরায়েল গাজায় আমাদের দেহ ও আত্মা ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা এখানেই মরবো।”
বাস্তুচ্যুত হওয়ার ভয় এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বহু ফিলিস্তিনি বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আহমেদ হিরজ নামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তিনি ও তার পরিবার অন্তত আটবার গৃহহীন হয়েছেন।
“এখন আমরা এখানে আছি, আর ইসরায়েল আবার উচ্ছেদ করতে চাইছে। কোথাও যাব না। আল্লাহর কসম, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি বহুবার, কিন্তু এখানেই মরতে রাজি আছি,” বলেন তিনি।
দক্ষিণ গাজায় যেতে অনীহা
ইসরায়েলের ঘোষণায় দক্ষিণ গাজায় যেতে বলা হলেও, অনেকেই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের অভিযোগ, দক্ষিণে গেলে মানুষ পশুর মতো রাস্তায় থাকতে বাধ্য হবে।
রাজাব খাদের বলেন, “আমি দক্ষিণ গাজায় গিয়ে কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর মতো রাস্তায় থাকতে চাই না। আমরা মানুষ, ইসরায়েল ও বিশ্বের অন্য মানুষের মতোই আমাদের বাঁচার অধিকার আছে।”
মানবিক পরিস্থিতির অবনতি
গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলো ভরে গেছে আহত মানুষে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করছে, পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর জানিয়েছে, চলমান সংঘাতে গাজার অন্তত ৭০% অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
ইসরায়েলের এই নতুন পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করবে এবং সহিংসতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
একাধিক দেশ ইসরায়েলকে দখল পরিকল্পনা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার তাগিদ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা মূলত ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উচ্ছেদ করারই একটি কৌশল। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯৪৮ সালের নাকবার পর থেকে এ ধরনের উচ্ছেদ ও দখলের চেষ্টা বারবার হয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধও অব্যাহত থেকেছে।
তাদের মতে, ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় অবস্থান কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রতিরোধও।
সারসংক্ষেপ
গাজায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনা এবং ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় প্রতিরোধ একটি নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপ ও সহায়তা ছাড়া এ অঞ্চলে শান্তি ফেরানো কঠিন হবে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই প্রতিরোধ কতদিন চলবে, এবং এর শেষ পরিণতি কী হতে পারে?
এম আর এম – ০৭৫৭, Signalbd.com



