ক্রিকেট

ডেঙ্গু আক্রান্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, হাসপাতালে ভর্তি তারকা ক্রিকেটার

Advertisement

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথায় ভুগছিলেন তিনি। পরবর্তীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন, তার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

চার দিন জ্বরে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি জ্বরে ভুগছিলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন এটি সাধারণ ভাইরাল জ্বর। তবে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান তিনি। রিপোর্টে ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পরই দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি পর্যবেক্ষণে আছেন।

স্ত্রীর আবেগঘন পোস্টে দেশজুড়ে প্রার্থনা

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাহমুদউল্লাহর স্ত্রী জান্নাতুল কাওসার একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জনসমক্ষে আনেন। তিনি স্বামীর হাসপাতালের একটি ছবি শেয়ার করে লেখেন—
“আল্লাহ যখন কাউকে ভালোবাসেন, তখন তাকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। সব কিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ভীষণ দয়ালু। আমার স্বামীর জন্য সবাই দোয়া করবেন—আল্লাহুম্মা বারিক লাহু।”

তার এই পোস্টের পর মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। হাজারো ভক্ত, ক্রিকেটপ্রেমী ও সহকর্মী খেলোয়াড়রা মাহমুদউল্লাহর দ্রুত আরোগ্য কামনায় মন্তব্য করেন ও শুভকামনা জানান।

ভক্তদের উদ্বেগ ও ভালোবাসা

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিয়াদের জন্য দোয়ার ঝড় তুলেছেন। কেউ লিখেছেন, “বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার ব্যাটসম্যানের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।” আবার কেউ বলেছেন, “রিয়াদ ভাই, আপনি আমাদের হৃদয়ের মানুষ। আল্লাহ যেন দ্রুত আপনাকে সুস্থ করে তোলেন।”

এমন ভালোবাসার বন্যা প্রমাণ করে, মাহমুদউল্লাহ শুধু একজন ক্রিকেটার নন—তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক আবেগের নাম, এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব: দেশে উদ্বেগজনক অবস্থা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, এ বছরই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করেছে এক লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে রোগের বিস্তার বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও নগর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

ক্রিকেটারদের মধ্যেও ডেঙ্গুর হানা

এটি প্রথম নয় যে কোনো জাতীয় দলের খেলোয়াড় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেন। এর আগেও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার, কোচ ও স্টাফ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে মাঠে অনুশীলনের সময় খেলোয়াড়দের মশার কামড়ের ঝুঁকি থাকে বেশি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এরই মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্টেডিয়াম, ড্রেসিংরুম ও আবাসিক এলাকায় নিয়মিত ফগিং করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ: বাংলাদেশের ক্রিকেটের নির্ভরতার নাম

২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। এর পর থেকে প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি ছিলেন অন্যতম নির্ভরযোগ্য নাম। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি—সব ফরম্যাটেই তিনি দলের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়েছেন।

বিশেষ করে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার ঐতিহাসিক শতক, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে অবদান, কিংবা এশিয়া কাপে তার ধীরস্থির ব্যাটিং—সবই তাকে পরিণত করেছে এক কিংবদন্তিতে।

তিনি শুধু একজন ব্যাটসম্যান নন, একজন অনুপ্রেরণাদায়ক নেতা, যিনি দলের কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও জীবনযাপন

বাংলাদেশের পেশাদার খেলোয়াড়রা সাধারণত নিয়মিত ফিটনেস ও ডায়েট মেনে চলেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলোয়াড়দের উচিত অনুশীলনের পর বিশ্রাম নেওয়ার সময় মশা প্রতিরোধী ব্যবস্থা ব্যবহার করা।

চিকিৎসকরা আরও পরামর্শ দিয়েছেন—পর্যাপ্ত পানি পান করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এবং শরীর দুর্বল মনে হলে দ্রুত পরীক্ষা করানো।

মাহমুদউল্লাহর পরিবারের পাশে পুরো ক্রিকেট মহল

বিসিবি সূত্র জানিয়েছে, বোর্ড চেয়ারম্যান ও জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা ইতিমধ্যেই মাহমুদউল্লাহর খোঁজখবর নিয়েছেন। কেউ কেউ হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছেন বলেও জানা গেছে।
বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, “রিয়াদ ভাই আমাদের পরিবারের অংশ। আমরা তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।”

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমসহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা।
যেমন—

  • বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা,
  • ফুলের টব, কুলার, পুরনো টায়ার বা খালি বোতলে পানি জমতে না দেওয়া,
  • সকালের ও বিকেলের দিকে মশা প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার করা,
  • শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরা,
  • এবং প্রয়োজনে মশারি ব্যবহার করা।

ডেঙ্গু হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

চিকিৎসকদের আশাবাদ

চিকিৎসকদের মতে, মাহমুদউল্লাহর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। রক্তে প্লাটিলেট স্বাভাবিক রয়েছে এবং জ্বরও কিছুটা কমেছে। যদি পরবর্তী কয়েকদিন একইভাবে অবস্থার উন্নতি হয়, তবে তিনি শিগগিরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন।

চিকিৎসক আরও বলেন, “মাহমুদউল্লাহ একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদ। তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, এজন্য আমরা আশাবাদী যে তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন।”

ভক্তদের প্রত্যাশা: আবারও মাঠে ফিরুক ‘সাইলেন্ট কিলার’

ক্রিকেটভক্তদের কাছে মাহমুদউল্লাহ শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, বরং একজন সংগ্রামী মানুষ, যিনি বারবার প্রমাণ করেছেন—নীরব মানুষরাও কত বড় লড়াকু হতে পারে। মাঠে তার শান্ত স্বভাব ও নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার জন্যই ভক্তরা তাকে বলেন ‘সাইলেন্ট কিলার’।

সবাই এখন শুধু একটি কথাই বলছে—“রিয়াদ ভাই, আপনাকে আবার মাঠে দেখতে চাই।”

বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন এক ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এই রোগের ঝুঁকি থেকে কেউই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়—তা প্রমাণ করেছে জাতীয় তারকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসুস্থতা। তবে চিকিৎসকদের আশা, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আবারও মাঠে ফিরবেন আগের মতো দৃঢ় মনোবল নিয়ে।

মাহমুদউল্লাহর মতো জাতীয় নায়কের অসুস্থতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা এখন সময়ের দাবি। সবার উচিত সচেতন থাকা, কারণ একটি মশা হয়তো কেড়ে নিতে পারে অনেক প্রিয় মুখের হাসি।

MAH – 13557 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button