বাংলাদেশ

এক ব্যাক্তির সর্বোচ্চ্য ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার বিষয়ে সবগুলো দল একমত

Advertisement

রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হলো আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত চলমান দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দল সর্বসম্মতভাবে মত দিয়েছে, একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা নেতৃত্বের স্থায়িত্ব নিয়ে বিতর্কে নতুন মোড় এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের সীমা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো

দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রিয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি—প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর হবে। জুলাই সনদে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ আলোচনায় মত দেন, “আমরা শুরু থেকেই বলেছি, ১০ বছরের বেশি একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। আমরা চাই এ প্রস্তাব এখনই ঘোষণা করা হোক এবং ভবিষ্যতের সংবিধান সংশোধনীতে এটি যুক্ত হোক।”

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবে সর্বসম্মতি

সংলাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল স্বাধীন পুলিশ কমিশন। বৈঠকের শুরুতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়, যেখানে পুলিশ বাহিনীর জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা এবং পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়।

দলগুলোর আলোচনার পর সবাই এই প্রস্তাবে সম্মত হয়। তবে কমিশনের কাঠামো, সদস্য মনোনয়নের প্রক্রিয়া এবং দায়িত্ব নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত আইন প্রণয়ন হবে বলে জানানো হয়েছে।

ড. আলী রিয়াজ বলেন, “স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তবে এর আইনি কাঠামো নিয়ে আলোচনা চলবে। এই কমিশন পুলিশের জনবান্ধব ভূমিকা নিশ্চিত করবে।”

কেন ১০ বছর সীমা গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একই ব্যক্তির হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন একটি আলোচিত বিষয়। একাধিক রাজনৈতিক দল মনে করে, দীর্ঘ সময় একই ব্যক্তির ক্ষমতায় থাকার ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ব্যাহত হয়। এছাড়া নেতৃত্বের নতুন প্রজন্মের সুযোগ সৃষ্টি হয় না।

তাই এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা আরও জোরদার হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের উদাহরণ

বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশে নেতৃত্বের মেয়াদ সীমিত করার নজির রয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। ভারতের মতো দেশে যদিও এমন সীমাবদ্ধতা নেই, তবে নিয়মিত নির্বাচন ও রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।

বাংলাদেশে যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়, তবে সেটি হবে দেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ।

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং অন্যান্য নিবন্ধিত দল সবাই এ বিষয়ে তাদের সমর্থন জানিয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর নেতারা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে রাজনীতিতে ভারসাম্য ফিরবে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, “এই উদ্যোগ গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে এর বাস্তবায়ন যেন সংবিধান অনুযায়ী সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কাঠামো কেমন হতে পারে

প্রস্তাব অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে এই কমিশন গঠিত হবে। এছাড়া একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি হবেন সদস্যসচিব। কমিশনে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মী এবং আইন বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এই কমিশন অভিযোগ তদন্ত, নীতি নির্ধারণ এবং পুলিশের পেশাগত মান উন্নয়নের কাজ করবে।

ভবিষ্যতের পথচলা

বৈঠকে অংশ নেওয়া সবাই জানিয়েছেন, ১০ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের সীমা এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন বিষয়গুলোকে জুলাই সনদে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুই প্রস্তাব যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তবে চ্যালেঞ্জ হবে এই সিদ্ধান্তগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং সবার মধ্যে আস্থা তৈরি করা।

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করা এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ঐকমত্য গণতন্ত্রকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। এখন সবার দৃষ্টি সংসদীয় প্রক্রিয়া এবং এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের দিকে।

এম আর এম – ০৫৪৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button