বিশ্ব

বিয়ের ১০ দিন আগে গয়না ও নগদ টাকাসহ মেয়ের হবু স্বামীর সঙ্গে পালালেন মা

উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের মাদরাক থানার একটি ছোট গ্রামে ঘটল একটি চমকপ্রদ এবং হতবাক করা ঘটনা। শিবানী নামে এক তরুণী, যার বিয়ে ছিল মাত্র ১০ দিন পর, এমন এক ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়েছেন। শিবানীর মা, অনিতা, কেবল তাঁর মেয়ের হবু জামাই রাহুলের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন, তা-ই নয়, পালিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ে গেছেন ৩.৫ লাখ টাকার বেশি নগদ অর্থ এবং ৫ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের গয়না। এই ঘটনা শিবানী ও তার পরিবারকে চরমভাবে হতবাক করে দিয়েছে।

শিবানীর বিয়ের পরিকল্পনা এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা

শিবানীর বিয়ের দিন দ্রুত চলে আসছিল। ১৬ এপ্রিল তার বিয়ের দিন ছিল এবং বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রও ছাপানো হয়ে গিয়েছিল। আত্মীয়-স্বজনদের আমন্ত্রণ জানানো ছিল, কিন্তু তার আগে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যা শিবানী ও তার পুরো পরিবারকে শোকস্তব্ধ করেছে। তার মা, অনিতা, হঠাৎ করে রাহুলের সঙ্গে পালিয়ে যান এবং সঙ্গে নিয়ে যান সমস্ত নগদ টাকা ও গয়না। শিবানী বলেন, “আমাদের ঘরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি নগদ অর্থ ছিল এবং ৫ লাখ টাকারও বেশি মূল্যমানের গয়না ছিল, সব কিছু নিয়ে চলে গেছেন মা। এই ঘটনা আমাদের জন্য একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল।”

শিবানীর মা ও হবু জামাইয়ের মধ্যে সম্পর্কের অদ্ভুত দিক

শিবানী জানান, তার মা এবং হবু জামাই রাহুল দীর্ঘদিন ধরে ফোনে কথা বলতেন। তার মা প্রায়ই রাহুলের সাথে ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলতেন এবং শিবানী তার মাকে কখনো কিছু বলতেও সাহস পাননি, কারণ বিয়ের তারিখ ছিল খুব কাছাকাছি। তিনি বলেন, “এমনকি কয়েক মাস ধরে তারা প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা ফোনে কথা বলতেন। আমি জানতাম কিছু অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে, কিন্তু বিয়ের প্রস্তুতির কারণে আমি কিছু বলিনি।”

শিবানী আরও বলেন, “আমার মা সবকিছু পরিকল্পনা করে করেছেন। এমনকি ১০ টাকাও ফেলে যাননি। আমার মনে হয়, তারা যা খুশি করতে পারেন, তবে আমি শুধু চাই আমাদের টাকা এবং গয়না ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”

শিবানীর বাবার বক্তব্য

শিবানীর বাবা, জিতেন্দ্র কুমার, যিনি বেঙ্গালুরুতে ব্যবসা করেন, জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বুঝতে পারছিলেন কিছু একটা ঠিক নেই। তিনি জানান, “আমি শুনেছি, আমার স্ত্রী (অনিতা) এবং রাহুল ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন, কিন্তু বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে আসার কারণে আমি কিছু বলিনি। এখন আমার স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার পর, আমি তাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল।”

জিতেন্দ্র আরও বলেন, “আমি রাহুলকেও ফোন করেছিলাম, কিন্তু সে প্রথমে অস্বীকার করেছিল যে সে অনিতার সঙ্গে নেই। কিছুক্ষণ পর সে আমাকে বলেছিল যে আমি ২০ বছর ধরে আমার স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি এবং আমাকে তাকে ভুলে যেতে বলেছিল। এরপর দুজনের ফোনই বন্ধ হয়ে যায়।”

পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি

শিবানীর বাবা জানান, ৬ এপ্রিল রাতে অনিতা তার হবু জামাই রাহুলের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এরপর তিনি পুলিশে অভিযোগ জানান। মাদরাক থানার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “একটি নিখোঁজ ডায়েরি নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং আমাদের তদন্ত চলছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

আইনগত পদক্ষেপ এবং পুলিশ তদন্ত

মাদরাক থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই একটি মামলা রুজু করেছে এবং শিবানীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ বলেছে, তারা এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করবে এবং যদি প্রয়োজন হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিবানীর পরিবার এখন শুধু চাইছে তাদের হারানো টাকা এবং গয়নাগুলি ফেরত পেতে।

একটি সামাজিক সমস্যা এবং পরিবারিক সংকট

এই ধরনের ঘটনা সমাজে একটি বড় ধরনের উদ্বেগের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, এক পরিবারে ঘটে যাওয়া এমন একটি অপ্রত্যাশিত এবং অমানবিক ঘটনা অন্যদের জন্যও সতর্কবার্তা হয়ে উঠতে পারে। শিবানীর মা, অনিতা, যে তার পরিবারের বিশ্বাস এবং সম্পর্ককে ভেঙে দিয়ে পালিয়ে গেছেন, তা একটি গভীর প্রশ্ন তৈরি করে: ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রতি আমরা কতটা সতর্ক এবং আন্তরিক?

এমন ঘটনা সমাজে গভীর আলোচনা ও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে পরিবারিক সম্পর্কের অবক্ষয় এবং অন্যদিকে অর্থের প্রতি অনৈতিক আকর্ষণ সমাজে সম্পর্কের শুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। শিবানী ও তার পরিবার যে কষ্টের মধ্যে পড়েছে, তা যেন কেবল এক পরিবার নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য একটি শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়।

সূত্র: এনডিটিভি, স্থানীয় সংবাদ এবং পুলিশের রিপোর্ট

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button