খেলা

বিশ্বকাপ জেতার পর আর কিছু চাওয়ার থাকে না: মেসি

Advertisement

ক্যারিয়ারের প্রায় সব শিরোপা জয় করে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার পর নিজের ফুটবলজীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই ফুটবল মহাতারকা।

বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের পর থেকেই যেন অন্য এক পরিতৃপ্ত মেসিকে দেখা যাচ্ছে। আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি বলেছেন, একজন ফুটবলারের জীবনে বিশ্বকাপের চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না। “আমি সব জিতেছি, এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই”— এমন মন্তব্য করে নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সেরা সময়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

ইন্টার মায়ামিতে মেসির নতুন অধ্যায়

বার্সেলোনায় দুই দশকের রাজত্ব শেষে পিএসজি হয়ে এখন লিওনেল মেসি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। সম্প্রতি মায়ামি শহরে অনুষ্ঠিত এক ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশ নিয়ে ফুটবল ও জীবনের নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহরের মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ, যিনি মেসিকে ‘মায়ামির প্রতীকী চাবি’ উপহার দেন সম্মানসূচকভাবে।

মেসিকে জিজ্ঞেস করা হয়— এতসব অর্জনের পরও তার আর কোনো লক্ষ্য আছে কি না? উত্তরে তিনি বলেন, “বিশ্বকাপ জয়ের পর মনে হয়েছে আমার ক্যারিয়ার পূর্ণতা পেয়েছে। এটা এমন এক অনুভূতি যা কথায় প্রকাশ করা যায় না। আমি সব ট্রফি জিতেছি, আমার সব স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”

“বিশ্বকাপ জেতার পর আর কিছু চাওয়ার থাকে না”

২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে নেতৃত্ব দেন মেসি। ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় তার দেশ। সেই ম্যাচে দুই গোল করে এবং পেনাল্টি শুটআউটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে দলের সবচেয়ে বড় নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি।

মেসি বলেন, “একজন খেলোয়াড়ের জীবনে বিশ্বকাপ জেতা সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। আমি যখন সেই ট্রফি তুলেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল জীবনের সব পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। এর চেয়ে বড় কিছু আর হতে পারে না।”

তার এই মন্তব্যে উঠে আসে এক তৃপ্ত মনোভাব— যিনি ইতিমধ্যেই ফুটবলের প্রতিটি বড় শিরোপা নিজের করে নিয়েছেন।

অতীতের ব্যর্থতা থেকে শেখা

মেসি স্মরণ করেন ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি, যেখানে জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে হারতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। তিনি বলেন, “সেই সময়টা খুব কষ্টের ছিল। ফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে ট্রফি হাতছাড়া হওয়া আমার জন্য কঠিন অভিজ্ঞতা। কিন্তু জীবনে সব অভিজ্ঞতাই শিক্ষা দেয়। ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মনে হয়েছে, সেই ব্যথা সব পেরিয়ে এসেছি।”

এই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এখন খেলাটিকে আরও বেশি উপভোগ করতে চান। “এখন আমি শুধু খেলা উপভোগ করতে চাই। যতদিন শরীর ও মন সায় দেয়, আমি খেলে যাব,” বলেন মেসি।

ক্যারিয়ারের অর্জন: ফুটবলের ইতিহাসে অনন্য

মেসির ক্যারিয়ারে রয়েছে অসংখ্য রেকর্ড ও অর্জন। আটবার ব্যালন ডি’অর জয়, চারবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি, ১০টি লা লিগা শিরোপা, ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা ও ২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয়— সব মিলিয়ে তার ট্রফি ক্যাবিনেট ভরপুর।

মেসির কথায়, “আমি কখনও ভাবিনি এতদূর আসব। কিন্তু বার্সেলোনা, আর্জেন্টিনা ও এখন মায়ামি— সবার ভালোবাসায় আমার যাত্রা অসাধারণ হয়ে উঠেছে।”

মায়ামি শহরের ভালোবাসায় মুগ্ধ মেসি

মায়ামিতে আসার পর থেকেই স্থানীয়দের ভালোবাসায় আপ্লুত মেসি। ব্যবসায়িক সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই শহরে প্রথম দিন থেকেই মানুষের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আজ যেভাবে আমাকে সম্মান জানানো হলো, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। মায়ামি এখন আমার দ্বিতীয় বাড়ি।”

তিনি আরও বলেন, “আমেরিকার ফুটবল ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। এখানে অনেক সম্ভাবনা আছে। আমি চাই, আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে এই লিগে কিছু অবদান রাখতে।”

পূর্ণতা পেয়েছে ফুটবলের এক যুগ

ফুটবল বিশ্লেষক ও সাবেক খেলোয়াড়দের মতে, মেসির এই বক্তব্য শুধু এক ব্যক্তির নয়, বরং এক যুগের সমাপ্তি নির্দেশ করছে। আর্জেন্টিনার সাবেক ডিফেন্ডার কিকে উলফ বলেন, “মেসি শুধু ফুটবল খেলোয়াড় নন, তিনি এক যুগের প্রতীক। তার বিশ্বকাপ জয় ফুটবল ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।”

অনেকে মনে করছেন, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে হয়তো মেসিকে দেখা যাবে না। তবে তিনি যে ফুটবলকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, তা আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসি যে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন, তা ফুটবলের বাইরেও এক জীবনদর্শন হয়ে উঠেছে। তিনি এখন শুধুই খেলাটি উপভোগ করতে চান, ফলাফল নয়। হয়তো এটাই এক কিংবদন্তির আসল পূর্ণতা— যখন জেতার পর আর কিছু চাওয়ার থাকে না।

এম আর এম – ২১২০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button