খেলা

ডাবল হর্স নাইটে চ্যাম্পিয়ন অমিও

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন দিগন্তের সূচনা করলেন মাজেদুল রেজা অমিও। আন্তর্জাতিক মানের থাই মার্শাল আর্ট খেলা মুয়েথাইয়ের ডাবল হর্স নাইট প্রতিযোগিতায় অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে দেশীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়নের মুকুট অর্জন করেছেন তিনি। তার এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্যও এক গর্বের বিষয়।

চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতা হয় শুক্রবার (২৭ জুন) বিকালে। আয়োজনে ছিল যমুনা গ্রুপ, এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন ইয়াসিন ইসলাম নাজেল। আয়োজকদের ভাষ্য মতে, এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের যুব সমাজের মাঝে মার্শাল আর্ট ও আত্মরক্ষার কৌশল জনপ্রিয় করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের নাম তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

অমিওর অসাধারণ সাফল্য

মাজেদুল রেজা অমিও ছিলেন দেশীয় ক্যাটাগরির প্রতিযোগীদের মধ্যে অন্যতম প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ। মোট ২৭ জন বাংলাদেশি প্রতিযোগীর মধ্যে অমিও তার শক্তি, নিখুঁত কৌশল এবং মনোবলের কারণে চ্যাম্পিয়ন হন। তার এই পারফরম্যান্স প্রমাণ করেছে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদরা যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম।

অমিওর হাতে বিজয়ীর বেল্ট তুলে দেন ডাবল হর্স নাইট টুর্নামেন্টের সিইও ইয়াসিন ইসলাম নাজেল এবং থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের ম্যানেজার পানচাই। এই বেল্ট তার জন্য শুধু একটি পুরস্কার নয়, বরং দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার সনদ।

আন্তর্জাতিক রূপরেখায় ডাবল হর্স নাইট

‘ডাবল হর্স নকআউট ফাইট নাইট জিরো জিরোট ওয়ান’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্ট ছিল আন্তর্জাতিক মানের। এতে অংশ নেয় মোট ৩৪ জন ক্রীড়াবিদ, যার মধ্যে বাংলাদেশের ছিল সর্বাধিক—২৭ জন। ভারতের তিনজন, আর থাইল্যান্ড ও কিরগিজস্তানের দুজন করে ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিযোগিতায় অ্যামেচার ও প্রফেশনাল—উভয় বিভাগেই ১৭টি বাউট অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদরা থাই মার্শাল আর্টের বিভিন্ন কৌশল প্রদর্শন করেন। এতে প্রত্যেক ম্যাচই ছিল উত্তেজনাপূর্ণ ও টানটান উত্তেজনায় ভরা।

অন্যান্য বিজয়ীদের পারফরম্যান্স

অমিও ছাড়াও এদিন বাংলাদেশের আরও কয়েকজন ক্রীড়াবিদ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবিত আবদুল্লাহ, আরাফাত ওসমান, হোসেন মোহাম্মদ সাদমান, রাদিন আহমেদ, মাহির জিদান, সাইদ মোহাম্মদ এনাম, ইয়াসিন ইসলাম এবং ফারাহ নওশিন ভুঁইয়া। নারী বিভাগের মধ্যে ফারাহের পারফরম্যান্স বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।

এইসব বিজয়ী তরুণ-তরুণীরা প্রমাণ করেছেন, আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা সীমাহীন। যথাযথ প্রশিক্ষণ, পৃষ্ঠপোষকতা এবং সুযোগ পেলে তারাও বিশ্বমঞ্চে দেশের পতাকা উড়াতে পারেন।

মুয়েথাইয়ের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মুয়েথাই হচ্ছে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্ট। এটি এখন অলিম্পিক স্বীকৃত ক্রীড়া হিসেবে বিশ্বের নানা প্রান্তে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে এটি শুধু ক্রীড়া নয়, বরং একটি জীবনশৈলী।

বাংলাদেশে এই খেলার প্রসার এখনো সীমিত হলেও, এ ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এর গ্রহণযোগ্যতা ও আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে যুব সমাজের মাঝে আত্মবিশ্বাস, শারীরিক সক্ষমতা এবং মানসিক দৃঢ়তা তৈরিতে মুয়েথাই হতে পারে কার্যকর মাধ্যম।

পৃষ্ঠপোষকদের ভূমিকা ও পরিকল্পনা

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করেন যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম। তিনি জানান, “আমরা চাই বাংলাদেশের তরুণরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান তৈরি করুক। মুয়েথাইয়ের মতো খেলাধুলা আমাদের যুবসমাজকে আত্মবিশ্বাসী, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও শারীরিকভাবে সক্ষম করে তুলবে।”

বাংলাদেশে মুয়েথাই প্রসারের জন্য বাংলাদেশ মুয়েথাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পৃষ্ঠপোষক ইয়াসিন ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। তার প্রত্যাশা, “আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০০ জন ক্রীড়াবিদকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাঠানো সম্ভব হবে।”

অমিওর স্বপ্ন ও বার্তা

বেল্ট জয়ী অমিও বলেন, “আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। এই বেল্ট আমি বাংলাদেশের জন্য জয় করেছি। আশা করি, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বড় অর্জন এনে দিতে পারবো।”

তিনি আরও বলেন, “যুবকদের বলবো—ড্রাগ, সহিংসতা বা হতাশার মধ্যে না ডুবে ক্রীড়াকে বেছে নাও। মুয়েথাই শুধু খেলা নয়, এটি চরিত্র গঠনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।”

উপসংহার

মাজেদুল রেজা অমিওর এই অর্জন প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে প্রতিভার কোনো ঘাটতি নেই। প্রয়োজন শুধু সঠিক দিকনির্দেশনা, প্রশিক্ষণ এবং পৃষ্ঠপোষকতা। মুয়েথাইয়ের মতো ক্রীড়াকে জনপ্রিয় করতে হলে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে এর প্রশিক্ষণ চালু করা, পেশাদার কোচ নিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া জরুরি।

ডাবল হর্স নাইটের এই আয়োজন কেবল একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল না—এটি ছিল বাংলাদেশের সম্ভাবনার প্রদর্শনী। এ ধরনের আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট মঞ্চে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি পরিচিত নাম।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button