শিক্ষা

সুরা বুরুজে বর্ণিত দুই সম্প্রদায়: ঈমানদার ও অবিশ্বাসীদের শিক্ষণীয় গল্প

Advertisement

ইসলামের পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর নির্দেশ ও শিক্ষা দিয়ে ভরা। কোরআনের প্রতিটি সূরা মানবজাতির জন্য নৈতিক শিক্ষা এবং ঈমানদারদের জন্য প্রেরণার এক অমূল্য উৎস। সেই কোরআনের অন্যতম সূরা হলো সূরা বুরুজ, যা মূলত ঈমান, ধৈর্য্য, প্রতিশোধ এবং আল্লাহর শাস্তি ও পুরস্কারের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছে।

সূরা বুরুজে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে দুটি সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন—যারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করেছে এবং যাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এই দুই সম্প্রদায় হলো ফেরাউন ও সামুদের সম্প্রদায়। এদের উদাহরণ মুসলিম সমাজকে সতর্ক করে দেয়, যেভাবে অবিশ্বাস এবং অহঙ্কার ধ্বংসের পথের দিকে পরিচালিত করে।

সামুদ সম্প্রদায়: নবী সালেহ (আ.) এবং তাদের করুণ পরিণতি

সামুদ সম্প্রদায়ের নবী ছিলেন হজরত সালেহ (আ.)। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি তাদেরকে ঈমান এবং নৈতিক জীবনযাপনের পথে আহ্বান করেছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষের সৃষ্টি করেছেন মাটির থেকে এবং যেটি দিয়ে জীবন পরিচালনা সম্ভব। এই মাটির উপরে বসতি গড়ে মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ ও সহায়তা দিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।

হজরত সালেহ (আ.) তাদেরকে সতর্ক করেছিলেন, “তোমরা যদি আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগ না দাও, তোমাদের সমাজ ধ্বংস হবে।” তবে সামুদ সম্প্রদায়ের মানুষ তার আহ্বানকে অবজ্ঞা করেছিল। তারা নবীর প্রতি অবিশ্বাস প্রদর্শন করেছিল এবং ঈমান আনার পরিবর্তে মুজিজা প্রার্থনা করতে লাগল।

নবী সালেহ (আ.) আল্লাহর অনুমতিতে একটি অসাধারণ মুজিজা দেখালেন—পাথর থেকে একটি উট বের হল। এই উট ছিল আল্লাহর দানের নিদর্শন এবং সতর্কবার্তা। কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে এটি যথেষ্ট ছিল না; তারা আল্লাহর পক্ষকে অবজ্ঞা করল এবং মুজিজাকে ধ্বংসের চেষ্টা করল।

শেষ পর্যন্ত, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিলেন। কোরআন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, যে সম্প্রদায় তার নবীর আহ্বানকে অবজ্ঞা করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহকে মান্য করে না, তার ভাগ্য ধ্বংসে শেষ হয়। সামুদ সম্প্রদায়ের এই করুণ পরিণতি মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে দেয়, যে ঈমানের পথে অবিশ্বাস ও অহঙ্কার কখনোও রক্ষা পায় না।

ফেরাউন সম্প্রদায়: মিশরের দাসত্ব ও অহঙ্কার

ফেরাউন ছিলেন মিশরের একজন স্বৈরশাসক রাজা। ইতিহাস অনুযায়ী, সে ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজত্ব করেছিল এবং নিজেকে খোদার সমতুল্য দাবি করত। তার অহঙ্কার ও ক্ষমতার লোভ তাকে আল্লাহর প্রতি অবাধ্য করে তুলেছিল।

আল্লাহ তায়ালা তার সম্প্রদায়ের হেদায়েতের জন্য নবী মুসা (আ.) প্রেরণ করেছিলেন। মুসা (আ.)-কে নীলনদ, লাঠি, পানি ও অন্যান্য চমকপ্রদ ৯টি মুজিজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফেরাউন ও তার অনুসারীরা সব মুজিজা প্রত্যাখ্যান করল। তারা মুসা (আ.) এবং ঈমানদারদের ধ্বংস করার চেষ্টা করল।

ফলস্বরূপ, আল্লাহ তায়ালা ফেরাউন ও তার অনুসারীদের কঠোর শাস্তি দিলেন। কোরআন বর্ণনা করে যে, তাদের সমূলে নীলনদে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়। ফেরাউনের এই গল্প মুসলমানদের কাছে একটি শিক্ষা—অহঙ্কার, অবিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা কখনো ফলপ্রসূ হয় না।

সূরা বুরুজের শিক্ষা: ঈমান ও ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তা

সূরা বুরুজ মূলত চারটি মূল শিক্ষাকে তুলে ধরে:

  1. ঈমান ও ধৈর্যের গুরুত্ব: আল্লাহর পথে সত্যিকারের বিশ্বাস এবং ধৈর্য্যই ঈমানদারদের চিরস্থায়ী পুরস্কার নিশ্চিত করে।
  2. মুজিজা ও আল্লাহর নিদর্শন মান্য করা: নবী ও মুজিজার প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর দানকে সম্মান করা প্রয়োজন।
  3. অবিশ্বাসীদের করুণ পরিণতি: যারা অহঙ্কার, অবিশ্বাস এবং আল্লাহর নিয়মকে অমান্য করে, তাদের পরিণতি ধ্বংস।
  4. আল্লাহর শাস্তি ও ন্যায়: যারা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে না এবং অপরাধের পথে চলতে থাকে, তাদের জন্য শাস্তি অনিবার্য।

সূরা বুরুজ মুসলমানদের শেখায় যে, ঈমান, ধৈর্য্য এবং নৈতিকতা আমাদের জীবনের মূল স্তম্ভ। এছাড়াও এটি ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরে।

সাম্প্রতিক প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ

আজকের যুগেও সামুদ ও ফেরাউনের উদাহরণ আমাদেরকে সতর্ক করে। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও সমাজের উন্নতি থাকা সত্ত্বেও মানুষ যদি অহঙ্কার ও অমানবিক আচরণের দিকে ঝুঁকে যায়, তাহলে ধ্বংসের পথ তৈরি হয়।

কোরআনের এই শিক্ষা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে:

  • ধৈর্য্য এবং সততা সামাজিক স্থায়িত্বের জন্য অপরিহার্য।
  • ঈমানদার হতে হলে সমাজের চাপ ও প্রতিকূলতাকে মানতে হয়।
  • অহঙ্কার ও অবিশ্বাসী আচরণ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়।

সূরা বুরুজের গল্প কেবল অতীতের ইতিহাস নয়, এটি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার উৎস। সামুদ ও ফেরাউনের করুণ পরিণতি থেকে স্পষ্ট যে, ঈমান, ধৈর্য্য, কৃতজ্ঞতা ও নৈতিকতা মানব জীবনের মূল চাবিকাঠি। যারা এই শিক্ষাকে অনুসরণ করে, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে এবং চিরস্থায়ী শান্তি ও সাফল্য পায়।

অতএব, মুসলিম জাতিকে এই গল্প থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর পথে চলা এবং ঈমানদার হওয়ার তাগাদা দেওয়া হয়। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং নবীর আহ্বান মান্য করাই মানুষের জীবনের সঠিক পথ।

MAH – 12525 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button