এশিয়া কাপ আর্চারিতে স্বর্ণ জিতলেন বাংলাদেশের আলিফ
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আবারও যোগ হলো এক গর্বের অধ্যায়। আর্চারিতে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণপদক এনে দিলেন আব্দুর রহমান আলিফ। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ আর্চারির রিকার্ভ পুরুষ এককে চূড়ান্ত লড়াইয়ে জাপানের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়াতা গাকুতোকে হারিয়ে এ সাফল্য অর্জন করেন তিনি। এই জয়ে কেবল একটি পদকই অর্জিত হয়নি, বরং আলিফ দেখিয়েছেন—পরিশ্রম, প্রতিশ্রুতি আর আত্মবিশ্বাস থাকলে বিশ্ব মঞ্চেও বাংলাদেশের পতাকা শীর্ষে উঠানো সম্ভব।
শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল: শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চ
চূড়ান্ত ম্যাচটি শুরু থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। প্রথম দুই সেটে ২-০ এবং ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিলেন আলিফ। বাংলাদেশের তরুণ এই আর্চার নিজের নির্ভুল নিশানায় প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেন শুরুতেই। তবে জাপানি প্রতিপক্ষ মিয়াতা গাকুতো সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নন। পরের দুই সেটে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচে সমতা আনেন ৪-৪ পয়েন্টে।
শেষ সেটেই ঠিক হয়ে যায় স্বর্ণপদকের ভাগ্য। ঐতিহাসিক মুহূর্তে আলিফ নিজের স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রেখে ২৬-২৯ পয়েন্টে জয় নিশ্চিত করেন। সেই সঙ্গে বাজে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, যা শোনা যায় এশিয়া কাপের গৌরবময় মঞ্চে।
আলিফের সাফল্যের পেছনের গল্প: নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের প্রতিচ্ছবি
আব্দুর রহমান আলিফের এই জয় হঠাৎ করে আসেনি। তার আর্চারিতে হাতেখড়ি হয় স্কুল জীবনেই। বরিশালের এক স্থানীয় ক্লাবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তীতে আর্চারি ফেডারেশনের নজরে আসেন প্রতিভার কারণে। জাতীয় দলে ডাক পেয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন ধাপে ধাপে। দেশের হয়ে বহু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, তবে এবারই প্রথম একক ইভেন্টে স্বর্ণ জিতলেন।
সাফল্য প্রসঙ্গে আলিফ বলেন,
“দীর্ঘদিন ধরেই স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক জেতার। আজ সেটা সত্যি করতে পেরে গর্বিত। আমি এই পদকটি বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করছি।”
প্রতিক্রিয়া: গর্বে অভিভূত ক্রীড়া অঙ্গন
বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনিসুর রহমান বলেন,
“আলিফের এই জয় দেশের আর্চারি ইতিহাসে এক মাইলফলক। তার এই সাফল্য প্রমাণ করে আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি। তরুণ আর্চারদের জন্য এটি হবে এক বড় অনুপ্রেরণা।”
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে জানানো হয়েছে, আলিফকে পুরস্কৃত করা হবে এবং ভবিষ্যতে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য: অলিম্পিকে পদক জয়ের প্রত্যাশা
আলিফ এখনো থেমে থাকতে চান না। তার লক্ষ্য আরও বড়। পরবর্তী ধাপ হিসেবে এশিয়ান গেমস ও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের প্রস্তুতি ও পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা।
তিনি বলেন,
“আমি চাই বাংলাদেশ অলিম্পিকে আর্চারিতে প্রথম পদক অর্জন করুক। তার জন্য কঠোর অনুশীলন, মানসিক প্রস্তুতি এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন।”
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও গণমাধ্যমের প্রশংসা
আলিফের বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসার ঝড় ওঠে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনেই আলিফকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,
“আলিফের এই অর্জন বাংলাদেশের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর। খেলাধুলায় আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।”
সমাপ্তি: নবজাগরণে আর্চারি
আব্দুর রহমান আলিফের স্বর্ণপদক জয় শুধুই একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি নবজাগরণের বার্তা। আমাদের দেশের তরুণরা সঠিক দিকনির্দেশনা, সহযোগিতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য আনতে পারে—এটি তার প্রমাণ।
আশা করা যায়, এই জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বিশ্ব আর্চারি মঞ্চে আরও বহু পদক ঘরে তুলবে।
