বিশ্ব

গাজায় একদিনে ১০৩ জন নিহত, ত্রাণের অপেক্ষায় প্রাণ গেল ৬০ জনের

Advertisement

 ইসরায়েলি হামলার রক্তক্ষয়ী ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকা আরও একবার মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বুধবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ত্রাণের অপেক্ষায় সারিবদ্ধ ছিলেন। ভয়াবহ এই মানবিক বিপর্যয় নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১০৩ জন, আহত প্রায় ৪০০

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার (৩০ জুলাই) স্থানীয় সময় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দিনভর চালানো বিমান হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন ১০৩ জন। তাদের মধ্যে অন্তত ৬০ জন মানুষ ত্রাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষারত ছিলেন। এছাড়া গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আহতদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

৭ অক্টোবর থেকে মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়াল

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এ পর্যন্ত ৬০ হাজার ১৩৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। ত্রাণ নেওয়ার পথে বা ত্রাণ কেন্দ্রের সামনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এখন ১ হাজার ২৩৯ জনে পৌঁছেছে। প্রতিদিনের বোমা ও গোলাবর্ষণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

ত্রাণ নিতে গিয়ে মৃত্যুর মিছিল

সাম্প্রতিক সময়ে গাজার মানুষের জন্য সীমিত আকারে কিছু ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হলেও তা চাহিদার তুলনায় অতি অল্প। এর ফলে যেকোনো সহায়তা পেলেই ক্ষুধার্ত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেখানে জড়ো হন। বুধবারের হামলার সময়ও ঠিক এমন পরিস্থিতি ছিল। ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে বিমান হামলা চালানো হয়, যাতে মুহূর্তের মধ্যে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে এলাকা।

সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশের মানবিক সহায়তা

সৌদি আরব সম্প্রতি ছয়টি ট্রাকে করে গাজার জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠিয়েছে। রাফা ক্রসিং দিয়ে এই সহায়তা প্রবেশ করে। এছাড়া জর্ডানের সহযোগিতায় আকাশপথেও প্যারাসুটের মাধ্যমে খাবার পাঠানো হচ্ছে। তবে এসব উদ্যোগ গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট মোকাবেলায় খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও অপরাধ তদন্ত

গত বছর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ ছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও মামলা চলছে। তবুও অব্যাহত রয়েছে দমননীতি ও হামলা।

মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার নিচ্ছে

বোমাবর্ষণ ও অবরোধে গাজার অবস্থা এখন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও সরঞ্জামের সংকট, খাদ্য ও পানির তীব্র অভাব এবং নিরাপত্তাহীনতায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন নতুন করে মৃত্যু, আহত এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ার খবর যোগ হচ্ছে।

সারসংক্ষেপ 
দীর্ঘ ১০ মাস ধরে চলা গাজায় ইসরায়েলি হামলার নৃশংসতায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাজুড়ে বিমান ও গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১০৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬০ জন ছিলেন ত্রাণের আশায় লাইনে দাঁড়ানো মানুষ। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৯৯ জন। এ হামলায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজার চলমান এই পরিস্থিতি থামবে কি না, তা নিয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যুদ্ধবিরতির আহ্বান থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা ও অবরোধ যদি অব্যাহত থাকে, তবে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। এখন বিশ্ববাসীর প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত এই রক্তক্ষয় থামবে কবে?

এম আর এম – ০৬১১ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button