রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি এবং সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের কেজি দামে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা ক্রেতাদের জন্য বিরাট চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ডিমের দামও আগের মতো উচ্চ অবস্থায় টিকে আছে।
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি: সরবরাহ সংকট ও মৌসুমী প্রভাব
রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে অবস্থান করছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ী বশির শেখ জানালেন, “পেঁয়াজের দাম বাড়ার মূল কারণ হলো কৃষকের সংরক্ষিত পুরোনো পেঁয়াজ বাজারে আসতে দেরি হওয়া এবং নতুন পেঁয়াজের আগমন এখনো শুরু হয়নি। ফলে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী মৌসুমে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমে যাবে। তবে বর্তমানে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ
- সরবরাহ কমে যাওয়া: মৌসুমী প্রভাব এবং সংরক্ষিত পেঁয়াজের পরিমাণ কম হওয়া।
- আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানি ঝুঁকি: ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আমদানির খরচও বেড়েছে।
- জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি: পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
ডিমের দামও স্থিতিশীল কিন্তু উচ্চ: প্রতি ডজন ডিম ১৩০-১৪০ টাকা
ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ডিমের দাম গত এক মাস ধরে বেশি ওঠানামা করছে না। বর্তমানে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।
- সাদা ডিম পাইকারি বিক্রিতে প্রায় ১২০ টাকা।
- লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির ডিমের দামও গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ডিমের দাম বেশ কিছুদিন ধরে একদমই কমেনি, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুরগির দাম: গত তিন সপ্তাহে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি
মুরগির বাজারেও দাম বৃদ্ধি অব্যাহত। ব্রয়লার মুরগির কেজি দাম বর্তমানে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যেখানে তিন সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ২৮০-৩০০ টাকা থেকে এখন ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, কয়েকদিন আগে মুরগির দাম কিছুটা কমে ১৫০-১৬০ টাকায় এসে ঠেকেছিল, কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় পাইকারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষত ছুটির দিনে ক্রেতা বেশি থাকায় দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
সবজির দামেও ঊর্ধ্বগতি, বিশেষ করে কাঁচা মরিচ ও টমেটো
মৌসুমি বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
- কাঁচা মরিচের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, যদিও গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে।
- বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি।
বাজারে টমেটোর সংকট চোখে পড়ার মতো। দেশি টমেটো এখন বাজারে নেই বললেই চলে, ফলে আমদানিকৃত টমেটোর দাম বেড়েছে, যা প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বেগুনের দামও বেড়েছে, গোল ও লম্বা আকৃতির বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
অন্যান্য সবজির যেমন করলা, কাঁকরোল, বরবটি ইত্যাদির দামও আগের তুলনায় ৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আনিস জানান, “বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়েছে। সরবরাহ কিছুটা কম থাকলেও বৃষ্টি শেষ হলে দাম কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করা যায়।”
চালের বাজার: মিনিকেট চালের দাম স্থিতিশীল, কেজিতে ৮০-৯০ টাকা
প্রায় দেড় মাস আগে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছিল, সেই দাম এখনো বজায় আছে। ঢাকার বাজারে ডায়মন্ড, সাগর, মঞ্জুর ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, আর মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের দাম ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
বাজারে দাম বৃদ্ধির সামগ্রিক প্রভাব
ক্রেতাদের উপর প্রভাব
দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন বাজার খরচ বাড়ছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য পেঁয়াজ, ডিম ও মুরগির দাম বৃদ্ধি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন অনেকের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিকোণ
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ সীমিত হওয়ায় দাম বেড়েছে, তবে ক্রেতার চাহিদা এখনও ভালো থাকায় তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়াও দাম বৃদ্ধির একটি বড় কারণ।
সরকারের করণীয়
সরকারের উচিত খাদ্যপণ্য সরবরাহ সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন পেঁয়াজের আগমন ও বৃষ্টিপাত কমার সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাংলাদেশের রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি ও সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম নিয়মিত বাড়তে থাকায় ক্রেতারা আজ ভুগছেন। সরবরাহ সংকট, মৌসুমি বৃষ্টি, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির মতো কারণগুলো দাম বৃদ্ধির পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
আমাদের প্রত্যাশা, শীঘ্রই নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার সাথে সাথে এবং বৃষ্টি কমার ফলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা দামকে কিছুটা স্থিতিশীল করবে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও খাদ্য চাহিদা মোকাবিলায় দায়িত্বশীল সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
MAH – 12142 , Signalbd.com



