আঞ্চলিক

জামায়াত প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলা, ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ

Advertisement

সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ‘রোজা ও পূজাকে একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ’ মন্তব্য করে বক্তব্য দেওয়ার জের ধরে এই মামলা করা হয়। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম মামলার বাদী রিদওয়ান হোসেন রবিন নামে এক আইনজীবীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ধর্মীয় বিতর্ক এবং নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে জামায়াত প্রার্থীর জন্য একটি নতুন জটিলতা তৈরি করল।

মামলার অভিযোগের বিস্তারিত: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত

মামলার অভিযোগে অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের বক্তব্যকে বাংলাদেশের মুসলিম জনসাধারণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে সরাসরি আঘাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১.৪ শতাংশ মুসলিম এবং ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী জনগণের কাছে ধর্ম ও ধর্মীয় রীতিনীতি একটি অতি স্পর্শকাতর বিষয়

অভিযোগে আরও বলা হয়, শিশির মনিরের এই মন্তব্য বিশৃঙ্খলা, উদ্বেগ ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

ইউটিউব চ্যানেলে বিতর্কিত মন্তব্য

অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, জামায়াত নেতা শিশির মনির ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের চেষ্টায় এই বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।

প্রচার মাধ্যম: তিনি ‘DSN’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে এই মন্তব্য করেন।

মন্তব্য: সেই ভিডিওতে তিনি ‘রোজা এবং পূজাকে একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ’ বলে উল্লেখ করেন।

সাইবার স্পেসে প্রচার: তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন সাইবার স্পেসে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের মুসলিম জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার পাশাপাশি ধর্মীয় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বাদীপক্ষের অভিযোগ, শিশির মনির একজন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও এমন স্পর্শকাতর মন্তব্য করে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন।

আদালতের নির্দেশ ও ডিবির তদন্ত

আইনজীবী রিদওয়ান হোসেন রবিন বাদী হয়ে মামলাটির আবেদন করলে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন।

তদন্তের নির্দেশনা: আদালত ডিবিকে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডিবির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে শিশির মনিরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইনের ধারা: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা।

শিশির মনিরের রাজনৈতিক অবস্থান

সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সুপ্রিম কোর্টের একজন পরিচিত আইনজীবী। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী

জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াতের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মতো স্পর্শকাতর অভিযোগে মামলা হওয়ায় এটি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। জামায়াত অতীতেও বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। এই মামলা জামায়াত ও তার মনোনীত প্রার্থীদের ভাবমূর্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলবে।

ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশ্ন ও রাজনৈতিক ফায়দা

যদিও বাংলাদেশের সংবিধান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সকল ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতার কথা বলে, তবে শিশির মনিরের এই মন্তব্য ধর্মীয় রীতিনীতির সংবেদনশীলতার জায়গায় আঘাত হেনেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা নিয়ে এমন মন্তব্য রাজনৈতিক ফায়দা লোটার একটি চেষ্টা হতে পারে। তবে এই ধরনের চেষ্টা উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উষ্মা সৃষ্টি করতে পারে। এই মামলা দেশের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব এবং বাকস্বাধীনতার সীমা নিয়েও বিতর্ক তৈরি করবে।

নির্বাচন সামনে রেখে নতুন বিতর্ক

সুনামগঞ্জ-২ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা দায়ের এবং ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে নতুন করে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হলো। ‘রোজা ও পূজাকে একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ’ বলার মতো স্পর্শকাতর মন্তব্য একজন আইনজ্ঞ হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ডিবির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতে পারে।

এম আর এম – ২৫৩৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button