জাতীয়

ড্রোন ড্রামা ‘ডু ইউ মিস মি’ প্রদর্শিত হলো রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে

Advertisement

গণঅভ্যুত্থান দিবসে দেশের জন্য এক নতুন ধরণের শিল্প-প্রদর্শনী

পরিচিতি ও উৎসবের পটভূমি

জুলাই মাস আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনাবলী থেকে শুরু করে দেশের ইতিহাসে গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে এ মাসটি স্মরণীয়। প্রতিবছরই এই দিনে দেশবাসী স্বাধীনতার স্বপ্ন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের মূল্যায়ন করে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট, মঙ্গলবার রাত ১১টায় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হলো এক অভিনব শিল্পকর্ম— ‘ডু ইউ মিস মি’ নামের ড্রোন ড্রামা।

এই ড্রোন ড্রামা, অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্রোন ব্যবহার করে আকাশে আলো ও ছবি ফুটিয়ে তোলা এক ধরনের ভিজ্যুয়াল নাটক, যেটি আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহাসিক স্মৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন। এই আয়োজনটি শুধুমাত্র শিল্পের মাত্রাই বৃদ্ধি করেনি, পাশাপাশি দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাবোধও জাগ্রত করেছে।

‘ডু ইউ মিস মি’ ড্রোন ড্রামার বিশদ বিবরণ

ড্রোন ড্রামা ‘ডু ইউ মিস মি’ মোট ১২ মিনিটের একটি দৃশ্যাবলী, যেখানে মোট ১২টি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোটিফ ও প্রতীক ব্যবহার করে দেশের গৌরবময় ইতিহাস ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।

শো’র শুরুতেই একটি হাত আকাশে ‘ডু ইউ মিস মি’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড ধরে রেখেছে, যা দর্শকদের মনে প্রশ্ন তোলে, “তুমি কি আমাকে মিস কর?” অর্থাৎ দেশের মানুষের মনে ইতিহাস ও দেশের প্রতি ভালোবাসা, স্মৃতি ও প্রত্যাশা কি এখনও বিদ্যমান?

এরপর একটি ভয়ঙ্কর ও কঠোর মুখাকৃতির ছবি ফুটে ওঠে, যা বিশেষভাবে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ হিসেবে চিত্রায়িত হয়েছে। এটির মাধ্যমে রচনা করেছেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নানান দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক।

ড্রোনগুলি উড়তে শুরু করে হেলিকপ্টার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়, যা একটি প্রতীকী রূপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ক্ষমতা বা ন্যায় বিচারের দিকে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।

এরপর দর্শকদের জন্য বিশেষ বার্তা হিসেবে আকাশে ভেসে ওঠে—
“আমরা জানি, ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ পুনর্গঠনে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ; কিন্তু দুর্গম পথ বলে থামবো না আমরা বাংলাদেশ পক্ষের লোক।”
“সবাই মিলেই আমরা গড়বো বাংলাদেশ ২.০।”

এই প্রতিটি বার্তা আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও ঐক্যের প্রতীক।

প্রযুক্তি ও শিল্পের সংমিশ্রণ: ড্রোন ড্রামার গুরুত্ব

ড্রোন ড্রামা বা ড্রোন লাইট শো আধুনিক প্রযুক্তি ও শিল্পের এক বিরল সংমিশ্রণ। এটি শুধু দর্শনীয় নয়, বরং একটি মেসেজ পৌঁছে দেয় বৃহৎ জনসমাগমের কাছে খুবই আকর্ষণীয় ও স্মরণীয় উপায়ে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমন ধরনের ড্রোন ড্রামা আয়োজনের মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হলো। বিশেষ করে এই ধরনের শোতে ব্যবহৃত ড্রোনগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম অনুযায়ী আকাশে নানা চিত্র ও বার্তা ফুটিয়ে তোলে, যা দর্শকদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উৎসব ও স্মরণীয় দিনে ড্রোন লাইট শো খুব জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস শিখতে ও দেশের প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে সাহায্য করবে।

‘ডু ইউ মিস মি’—একটি শিল্পকর্ম নয়, সময়ের দর্পণ

এই ড্রোন ড্রামা শুধু এক ধরনের বিনোদন নয়, বরং এটি দেশের ইতিহাস ও রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি দর্পণ। ১২টি মোটিফ ও বার্তার মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে অতীতের স্মৃতি ও বর্তমানের দায়িত্বের বার্তা দেওয়া হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, শো’তে ব্যবহৃত হেলিকপ্টার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য মূলত একটি প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক প্রতীক, যা দেশের স্বাধিকার সংগ্রাম ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যের মন্ত্র।

শো’তে বারবার উল্লেখ আছে যে, “আমরা জানি, ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ পুনর্গঠনে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ।” এটি দেশের মুক্তি সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক অর্জনগুলোকে সম্মান জানানো ও এগিয়ে চলার বার্তা।

“সবাই মিলেই আমরা গড়বো বাংলাদেশ ২.০” এই বাক্যাংশটি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ও আশা ব্যক্ত করে। এটি নতুন প্রযুক্তি, উন্নয়ন, সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতীক।

দর্শকের প্রতিক্রিয়া ও সমকালীন প্রেক্ষাপট

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত এই ড্রোন ড্রামা প্রদর্শনীতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে এই শো উপভোগ করেন, যা প্রমাণ করে দেশের সাধারণ মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহাসিক বার্তা গ্রহণে উৎসাহী।

বিভিন্ন বয়সের মানুষের উপস্থিতি এই শো’র জনপ্রিয়তা ও গুরুত্বকে আরও বৃদ্ধি করেছে। তরুণ প্রজন্ম যারা প্রথাগত ইতিহাস থেকে অনেক দূরে, তারা আধুনিক এই মাধ্যম থেকে দেশের ইতিহাস জানতে ও বুঝতে পেরেছে।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে এই ধরনের শিল্পকর্ম জাতীয় ঐক্য ও ঐতিহাসিক চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও ডিজিটাল শিল্পের উন্নয়ন

বাংলাদেশে ড্রোন ড্রামার মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সাংস্কৃতিক ইভেন্টগুলোর ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের উদ্যোগকে উৎসাহিত করলে, দেশের সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হবে দ্রুত।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজিটাল ও ভিজ্যুয়াল আর্টের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চেতনা উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের সংস্কৃতি পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া, ড্রোন ড্রামা শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার করলে ইতিহাস শেখার পদ্ধতি আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকর হবে। তরুণ সমাজের মধ্যে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে।

৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত ‘ডু ইউ মিস মি’ ড্রোন ড্রামা শুধু একটি অভিনব প্রযুক্তিগত শো ছিল না, বরং এটি দেশের ইতিহাস, গণতন্ত্র ও নতুন বাংলাদেশের গঠন প্রক্রিয়ার এক বিশেষ বার্তা।

এই আয়োজন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন ধারা নিয়ে এসেছে এবং দেশের মানুষের মধ্যে ঐতিহাসিক স্মৃতি ও বর্তমান দায়বদ্ধতার বোধ জাগিয়ে তুলেছে। ড্রোন ড্রামার মাধ্যমে ইতিহাসের চিত্রায়ন এক সময়ের নাটকীয়তা ও প্রযুক্তির মিলনে আধুনিক বাংলা সংবাদপত্র ও ডিজিটাল মিডিয়ার জন্য নতুন ধরনের কন্টেন্ট গড়ে তুলবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই ধরনের উদ্যোগ অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে, যেখানে প্রযুক্তি ও ঐতিহ্য একসাথে পথ চলবে।

MAH – 12153 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button