আঞ্চলিক

ডিএমপির ৬ অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারকে বদলি

Advertisement

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয়জন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারকে একযোগে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারের স্বাক্ষরিত আদেশ অনুযায়ী, ভিন্ন ভিন্ন শাখা থেকে কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে রদবদল করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এ বদলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল আনা হয়েছে। অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার ছয় কর্মকর্তাকে বদলি করে তাদের নতুন দায়িত্বে পাঠানোর আদেশ জারি হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এই আদেশ বৃহস্পতিবার জারি হলেও শনিবার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ। বিভিন্ন দপ্তর থেকে কর্মকর্তাদের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে স্থানান্তর করাকে পরিচ্ছন্ন প্রশাসনিক পুনর্জাগরণের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেকে।

রদবদলের বিস্তারিত ও কোন কর্মকর্তা কোথায় নিয়োগ পেলেন

আদেশ অনুযায়ী, পিওএম-উত্তর বিভাগে থাকা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আখিউল ইসলাম বিপিএম, পিপিএমকে নতুনভাবে ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিওএম শাখায় দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

অন্যদিকে ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগের (ইন্টারনাল ওভারসাইট অ্যান্ড অ্যাডমিন) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে সিটিটিসি বিভাগে বদলি করা হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সিটিটিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যেখানে তার অভিজ্ঞতা কাজে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার পরিত্রাণ তালুকদারকে বদলি করে মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইমরানুল ইসলাম (পিপিএম) সেবাকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগে।

সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. বকুল হোসেনকে নতুনভাবে ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগে বদলি করা হয়েছে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় তার অভিজ্ঞতা নতুন বিভাগেও কাজে লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) দপ্তরের ট্রাফিক-অ্যাডমিন ইউনিটে দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শারমিন আক্তার চুমকিকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে পিওএম-পশ্চিম বিভাগে। পিওএম শাখায় তিনি মাঠ পর্যায়ের নিরাপত্তা তদারকিতে দায়িত্ব পালন করবেন।

বদলির পেছনের প্রেক্ষাপট ও প্রশাসনিক উদ্দেশ্য

ডিএমপির অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে মাঝে মধ্যেই এমন রদবদল হয়ে থাকে। তবে এবার একযোগে ছয়জন এডিসিকে বদলির ঘটনা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় আকারের প্রশাসনিক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি সূত্র জানায়, চলমান প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবেই এই বদলি প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। নতুন বাস্তবতা, নগর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং বিভিন্ন বিভাগের কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই কর্মকর্তা বিন্যাস পরিবর্তন করা হয়েছে।

পুলিশের বিভিন্ন শাখায় দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতা বিনিময়ও বদলির একটি উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে। কোনো কর্মকর্তা দীর্ঘ সময় একই শাখায় দায়িত্ব পালন করলে সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ চাপ, সীমাবদ্ধতা বা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করা হয়।

নগর পুলিশের কাজের ধারায় কী পরিবর্তন আসতে পারে

ঢাকা মহানগরীর মতো জনবহুল শহরে নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন খাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়। এই প্রেক্ষাপটে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নতুন বিভাগে পাঠানো হলে সেখানে নতুন কর্মপদ্ধতি, নতুন দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্যম সৃষ্টি হতে পারে বলে প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

বিশেষ করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসতে পারে। মিরপুর ও মতিঝিল— উভয় অঞ্চলেই ট্রাফিক চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি। দুই বিভাগের এডিসিদের অদলবদল নতুন একটি সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো দাঁড় করাতে সহায়ক হতে পারে।

সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ থেকে ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগে বদলি হওয়া কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা রাজধানীর গোয়েন্দা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

পূর্বের রদবদলগুলোর সঙ্গে এবারকার পরিবর্তন কতটা আলাদা

সাধারণত ডিএমপি বছরে কয়েকবার কর্মকর্তা বদলি করে থাকে। তবে অধিকাংশ সময়ই তা এক থেকে দুইজন কর্মকর্তা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে। এবার ছয়জন গুরুত্বপূর্ণ এডিসিকে একসঙ্গে বদলি করার ফলে পরিবর্তনের পরিমাণ আগের তুলনায় বেশি।

সাধারণত নিরাপত্তা-সংকটময় পরিস্থিতি, বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রশাসনিক সংস্কারের সময়ই এমন বিস্তৃত রদবদল দেখা যায়। যদিও এবার রদবদলের পিছনে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বা নিরাপত্তাজনিত কারণ উল্লেখ করা হয়নি, তবুও ঢাকা মেট্রোর নিরাপত্তা কাঠামো আরও শক্তিশালী করার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে সামগ্রিক রদবদলের তাৎপর্য

নগর নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে জটিল হয়ে উঠছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সাইবার হুমকি, বিশেষ ইভেন্টে নিরাপত্তা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি— সবকিছু মিলিয়ে ডিএমপিকে দ্রুত অভিযোজনক্ষম হতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দায়িত্ব বদলের ফলে নতুন কর্মকর্তারা বিভাগভিত্তিক চ্যালেঞ্জগুলো নতুন দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ পাবেন। এতে বিভাগগুলোতে প্রশাসনিক সক্রিয়তা বাড়বে। নতুন জায়গায় গিয়ে তারা নিজেদের দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারবেন, যা সামগ্রিকভাবে ডিএমপির কাজের গতিশীলতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

ডিএমপির ছয় অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারকে স্থানান্তরের এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক পুনর্গঠনের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। নতুন দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও পরিকল্পনাকে ব্যবহার করে নতুন বিভাগগুলোকে আরও গতিশীল করবেন— এমন প্রত্যাশা রয়েছে। আগামী দিনে এই রদবদলের ফলে নগর পুলিশের কাজের মান, দক্ষতা ও সমন্বয় কতটা উন্নতি পায়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে নগরবাসী।

এম আর এম – ২২৪৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button