রাজধানীর ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে বৃহস্পতিবার মারধরের শিকার হওয়া নারীকে নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর চন্দ্রিমা উদ্যানের ঘটনা। দুই জায়গার ভিডিও ও ছবি দেখে নেটিজেনদের দাবি, উভয় ঘটনার নারী একই ব্যক্তি। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বর— দুই স্থানে ঘটে যাওয়া দুই ঘটনায় একই নারীকে ঘিরে দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানের মাজার খুঁড়তে গিয়ে এক নারী মারধরের শিকার হন। আর গত ১৩ নভেম্বর ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে আরেক দফা মারধরের ঘটনা সামনে আসে। ভিডিও ও ছবি দেখে অনেকে দাবি করছেন, দুটি ঘটনার নারী একই ব্যক্তি। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে স্পষ্ট নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
ঘটনা: ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে নারীকে মারধর ও গ্রেপ্তার
গত বৃহস্পতিবার কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচির মধ্যে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে হঠাৎই জনতার ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন এক নারী। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক তরুণী লাঠি দিয়ে বারবার ওই নারীকে আঘাত করছেন। আশপাশে উপস্থিত অনেকে তা দেখলেও কেউ হস্তক্ষেপ করেননি।
পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে নারীটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং পরদিন গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় দায়ের করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের দাবি, ওই নারীকে গ্রেপ্তার কার্যক্রম পুরনো মামলার অংশ হিসেবেই সম্পন্ন হয়েছে।
পুলিশ সূত্র ও মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ নারীর নাম সালমা ইসলাম। তবে এই নামই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও বড় আলোচনার জন্ম দেয়।
১ সেপ্টেম্বর চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার মাজারের ঘটনা
১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। সেদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা দেখতে পান, এক নারী জিয়াউর রহমানের মাজারের মাটি খুঁড়ছেন। তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, সেখানে জিয়াউর রহমানের দেহাবশেষ নেই। এ বক্তব্যে উত্তেজিত বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ফেলেন এবং কিছুক্ষণ পর তাকে মারধর করা হয়।
দীর্ঘ সময় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকার পর পুলিশ এসে ওই নারীকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। শেরে বাংলা নগর থানার পুলিশ তখন জানিয়েছিল, উদ্ধারকৃত নারীর নাম সালমা বেগম এবং তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা।
ঘটনাটি তখন কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। তবে পরে বিষয়টি ধীরে ধীরে আলোচনার বাইরে চলে যায়।
নতুন বিতর্ক: দুটি নারী কি একই ব্যক্তি?
ধানমণ্ডির ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরই নেটিজেনরা দুটি ঘটনা পাশাপাশি মিলিয়ে দেখেন। ফটো ও ভিডিও ফুটেজে নারীর চেহারা, চোখে থাকা চশমা, পোশাকের ধরন এবং নাম মিল পাওয়া যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত এই প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে— উভয় স্থানের নারী কি একই ব্যক্তি?
অনেকে চন্দ্রিমা উদ্যান ও ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরের ভিডিও পাশাপাশি রেখে তুলনা করেছেন। মন্তব্য করেছেন, নারীর শরীরের গঠন, কথাবার্তার ভঙ্গি ও আচরণগত মিল রয়েছে। নামেও近似তা স্পষ্ট— সালমা বেগম ও সালমা ইসলাম।
যদিও অনেকে মনে করছেন, শুধু ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশ্লেষণ বলেও দাবি করছেন।
পুলিশের অবস্থান ও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না পাওয়ার বিষয়টি
এখন পর্যন্ত পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি যে দুটি ঘটনায় গ্রেপ্তার বা উদ্ধার হওয়া নারী একই ব্যক্তি কি না। দুই ঘটনার নারীকে নিয়ে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য থেকে সংগৃহীত।
পুলিশ জানিয়েছে, ধানমণ্ডি থেকে আটক নারীকে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে তিনি ১ সেপ্টেম্বরের চন্দ্রিমা উদ্যানের ঘটনায় জড়িত কিনা, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
অনেকেই আশা করছেন, শিগগিরই পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্পষ্ট করবে। কারণ একই নারী হলে তা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
কেন দুটো ঘটনাই কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলো?
দুটি ঘটনাই রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল স্থানে ঘটেছে। চন্দ্রিমা উদ্যান জিয়াউর রহমানের মাজার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জায়গা; আর ধানমণ্ডি-৩২ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। তাই কেউ একই নারীকে দুই জায়গায় দেখা গেছে দাবি করায় বিষয়টি আরও রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া তথ্যই এই আলোচনাকে বড় করেছে। আর সংবেদনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেকোনো ঘটনার ভিন্নধর্মী ব্যাখ্যা দ্রুত জনগণের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করে।
তারা আরও বলছেন, প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না আসা পর্যন্ত জনমতভিত্তিক বিশ্লেষণই মুখ্য হয়ে থাকবে।
ধানমণ্ডি-৩২ এবং চন্দ্রিমা উদ্যান— দুটি জায়গার দুই ভিডিওকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা এখন জাতীয় আলোচনার অন্যতম বিষয়। একই নারী কি না, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নেটিজেনদের আলোচনায় ঘটনাটি আরও গুরুত্ব পেয়েছে। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি তথ্য প্রকাশ করে এবং আগামি দিনে এ বিতর্ক কোন পথে মোড় নেয়।
এম আর এম – ২২৪২,Signalbd.com



