আঞ্চলিক

মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা, সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত ৩

Advertisement

 ভোলার কাচিয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন মেঘনা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে স্থানীয়দের প্রতিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্পিডবোটযোগে আসা একটি সশস্ত্র দল গুলি করলে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন ঘেঁষা মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয়দের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্পিডবোটযোগে এসে সশস্ত্র একটি গ্রুপ স্থানীয়দের লক্ষ্য করে গুলি চালালে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

ঘটনাটির বিস্তারিত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাচিয়া ইউনিয়নের মেঘনা নদীর ভবানীপুর চর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী গ্রুপ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল। শনিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা নদী ভাঙন নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে একত্রিত হন। শতাধিক মানুষ নদীর ধারে গিয়ে বালু তুলতে থাকা একটি ড্রেজার থামিয়ে দেন এবং উত্তোলন বন্ধ করতে বাধ্য করেন।

সাক্ষীরা জানান, ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর স্পিডবোটে করে ৬–৭ জন সশস্ত্র ব্যক্তি ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে শাজাহান মীর (৭০), মোহাম্মদ আলী (৬০) এবং অপূর্ব শুভ (১৭) গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রত্যেকের শরীরেই ছররা গুলির আঘাত পাওয়া গেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনজনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, কয়েক মাস ধরে মেঘনা নদীর বিভিন্ন চর এবং নদী-পার এলাকার বালু উঠে যাচ্ছে নিয়মিতভাবে। প্রভাবশালী চক্রটি নদীর গভীর অংশ এবং বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে বালু তোলায় নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর ফলে বহু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং অসংখ্য পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ করেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভাঙন আরো তীব্র হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা নিজেরাই বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।

প্রভাব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, নিজেদের নিরাপত্তা এবং বাড়িঘর রক্ষার জন্যই তারা প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় অস্ত্রধারীরা গুলি চালানোয় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে তাদের জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই নদীর তীর ধসে পড়ছে, আর সেই ক্ষতির দায় কেউ নিতে চায় না।

যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন যে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ড্রেজার থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অস্ত্রধারীরা নির্দোষ মানুষের ওপর হামলা চালান।

প্রশাসনের অবস্থান ও তদন্ত

ঘটনা জানাজানি হলে ভোলা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তবে তারা পৌঁছানোর আগেই সন্ত্রাসীরা স্পিডবোটযোগে পালিয়ে যায়।

ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. তৈয়বুর রহমান জানান, আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং তারা নিরাপদ আছেন।

পুলিশ সুপার জানান, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কারা গুলি চালিয়েছে, কোন গ্রুপ জড়িত এবং তারা কোথায় অবস্থান করছে—এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানা গেছে।

মতামত ও ভবিষ্যৎ উদ্বেগ

বালু উত্তোলন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুধু পরিবেশের জন্য নয়, মানুষের জীবন-জীবিকাও ঝুঁকিতে ফেলে। মেঘনা নদীর এই এলাকা ভাঙনকবলিত প্রকৃতির হওয়ায় এখানে বালু তোলার ঝুঁকি আরও বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ন্ত্রিত ও বৈধ বালু উত্তোলন সরকারের তত্ত্বাবধানে না হলে এটি একসময় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও প্রশাসনের বড় দায়িত্ব।

মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন একটি দীর্ঘদিনের সমস্যার নাম, যা আজ তিনজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা না নিলে নদীভাঙন আরও বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাণহানির আশঙ্কাও বাড়বে। এখন নজর প্রশাসনের দিকে—তারা কী ব্যবস্থা নেয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেটিই দেখার বিষয়।

এম আর এম – ২২৩৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button