রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা ও ঝটিকা মিছিলে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২৪ ঘণ্টায় তাদেরকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য এবং তাদের কার্যক্রম আইন-শৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ।
ঘটনার বিস্তারিত
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নোয়াখোনা, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও ঢাকার বিভিন্ন থানার নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মমিনুল হক টিটু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ইউনিট সভাপতি মো. সবুজ, মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন আলমগীর এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ফয়সাল।
পুলিশ আরও জানায়, গ্রেফতারকৃতদের কাছে পাওয়া কাগজপত্র ও অন্যান্য আলামত নাশকতা ও আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গত মঙ্গলবারও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই সময় নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং শহরের শান্তি বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাই-অ্যালার্টে ছিল।
এদিন গ্রেফতারকৃতদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাশকতা মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘিরে পূর্বনির্ধারিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই গ্রেফতারের ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থিতিশীলতা ফেরার প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নাগরিকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযান পুলিশি সতর্কতার সঙ্গে ঘটনার নিয়ন্ত্রণে রাখায় শহরে শান্তি ফিরে এসেছে।
বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নেওয়ায় শহরে নাশকতা ও অশান্তি রোধ হয়েছে।
গ্রেফতারদের পরিচয় ও কর্মকাণ্ড
গ্রেপ্তাররা হলেন মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মমিনুল হক টিটু (৫৪), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ইউনিট সভাপতি মো. সবুজ (৩৪), মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম (৪৬), কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন আলমগীর (৫৪), ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ফয়সাল (৪৩), ঢাকা মহানগর উত্তর ৯৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুন্নবী ইফতেখার ওরফে রাজিব (৪৫), ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা লীগের সভাপতি সুলতানা রাবেয়া পপি (৪০), মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আজিম খান (৩৭), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী মো. পলাশ খান (৪২), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী এস এম আবুল হোসেন লিটন (৭০), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী আজিজুর রহমান ওরফে এ আর ডাবলু (৩৫), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুস সালাম (৩৫), ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মো. ইমরান হোসেন আবির (২৮), আওয়ামী লীগের ডেমরা শাখার সক্রিয় কর্মী মো. আব্দুল মান্নান (৫৫), ক্যান্টনমেন্ট থানার ১৫ নং ওয়ার্ডের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা (৫৪), ক্যান্টনমেন্ট থানা যুব লীগের ১৫ নং ওয়ার্ডের সক্রিয় কর্মী মো. আফজাল হোসেন রনি (৩৮), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মাসুম (৫১), ঢাকা মহানগর উত্তরের ২০নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক (৪৬), সবুজবাগ থানা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তাওহীদ হোসেন (৫৫), গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. ফরহাদ শেখ (৪৫), টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. জুয়েল আল মামুন (৪৩), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ইকরামুল হক (২৫), গাজীপুর জেলা কালিগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন (৪৮), নেত্রকোনা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহম্মেদ জুবায়ের (৩৬), নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী পারভেজ মোশারফ (৩২), ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ১৪ নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম (৫২), পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু সিদ্দিক খান (৩৫), তেজগাঁও থানার ২৬ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন (২৫), ডেমরা থানার সারুলিয়া ইউনিয়ন ১০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান খাঁন (৪০), চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দার (৬৫), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী মো. সিরাজুদ্দৌলা শিকদার (৩৫), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী মো. আজাদ (৩৮), বাংলাদেশ হকার্স লীগের সদস্য মোহাম্মদ খাইরুল বাশার মামুন (৪০), নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার ২১ নং ওয়ার্ডের যুবলীগ সদস্য জাকির হোসেন (২৬), কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার ২১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য শাহজাহান (৫৯), শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা থানার ২১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য পলাশ বেপারী (৩৬), ডেমরা থানার ২১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য হৃদয় শেখ ওরফে মামুন (৩৫), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী মো. লিখন শেখ (৩২), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী মো. আল ইসলাম (৩৩), সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার ৫ নং বড় দল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র সানা (৫৬), সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মো. শামছুল আলম (৪১), সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার সাধারণ সম্পাদক শম্ভু চরণ মন্ডল (৫৮) ও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী জহিরুল ইসলাম (৩০)।
আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
রাজধানীতে রাজনৈতিক অশান্তি ও নাশকতা রোধ করতে পুলিশি তৎপরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রেফতারগুলো দেখাচ্ছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধে তৎপর।
একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “এই ধরনের অভিযানের মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আগামিদিনে যদি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়, তবে রাজধানীতে শান্তি ও নিরাপত্তা দীর্ঘস্থায়ীভাবে ফিরবে।
ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর গ্রেফতারের ঘটনা রাজনৈতিক অশান্তি প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই গ্রেফতার অভিযান শহরে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং শহরের সাধারণ জীবনে স্বাভাবিকতা ফেরাতে এই ধরনের উদ্যোগ অপরিহার্য।
এম আর এম – ২২২৭,Signalbd.com



