রাজধানীর হৃদয়ভূমিতে ভয়াবহ ঘটনা, ড্রামের ভেতর পাওয়া গেল খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ; পুলিশ বলছে, পরিচয় এখনো অজানা
রাজধানীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশে ফেলে রাখা দুটি প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে খণ্ডিত একটি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ সংলগ্ন পানির পাম্পের পাশের ফুটপাত থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থল ও উদ্ধার প্রক্রিয়া
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, স্থানীয় পথচারীরা প্রথমে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে শাহবাগ থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দুটি বড় প্লাস্টিকের ড্রাম দেখতে পায়। একটি ড্রাম খুলতেই ভেতরে মানুষের দেহের খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, “দুটি ড্রামের একটিতে দেহের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে, মরদেহের সঙ্গে মাথাও ছিল।”
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ক্রাইম সিন ইউনিট, সিআইডি ও র্যাব সদস্যরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। ফরেনসিক টিম ড্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে।
পরিচয় এখনো অজানা
পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহটির পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ওসি খালিদ মনসুর বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড। আমরা মরদেহের অংশগুলো ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। ফলাফল এলে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রাম দুটি খুবই শক্তভাবে সিল করা ছিল, এবং বাইরের দিক থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। অনুমান করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ড অন্য কোথাও ঘটিয়ে মরদেহটি পরে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সংলগ্ন এলাকা ও হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মানুষের ভিড় জমে যায়। অনেকে বলেন, বিকেলের দিকে দুটি ড্রাম ফেলে যায় একটি পিকআপভ্যান, তবে কে বা কারা ফেলে গেছে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
তদন্তে নেমেছে একাধিক সংস্থা
ঘটনাটির গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সিআইডি, ও র্যাবের পৃথক টিম কাজ শুরু করেছে। শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, “মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকা ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।”
অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এলাকাবাসীকে গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
অপরাধের ধরনে নতুন প্রবণতা
আইনশৃঙ্খলা বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। খণ্ডিত মরদেহ ফেলার ঘটনা ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক বার্তা বহন করে এবং এটি অপরাধীদের কৌশলগত কর্মকাণ্ডের অংশও হতে পারে।
অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, “এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সাধারণত অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ বা প্রতিশোধের ফল হতে পারে। ড্রাম ব্যবহার করা হয় মরদেহ সহজে স্থানান্তর ও গোপন করার উদ্দেশ্যে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আতঙ্ক ছড়ানোর আগে অপরাধীরা ধরা পড়ে।”
কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশে ড্রাম থেকে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের এই ঘটনা আবারও রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। পুলিশের একাধিক সংস্থা কাজ শুরু করলেও, এখন পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির পরিচয় অজানা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সিসিটিভি বিশ্লেষণ ও ফরেনসিক রিপোর্টের মাধ্যমে শিগগিরই পুরো চিত্র পরিষ্কার হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পেছনে আসলে কারা, আর কেন?
এম আর এম – ২২২৩,Signalbd.com



