ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশ থেকে ৩২টি পেট্রলবোমা ভর্তি একটি লাগেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি বা নাশকতার উদ্দেশ্যে এই বোমাগুলো সেখানে ফেলে রাখা হয়েছিল।
ঘটনাস্থলে লাগেজ উদ্ধার অভিযান
ভাঙ্গা থানার পুলিশ জানায়, দুপুরের দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। একটি কালো রঙের লাগেজ মহাসড়কের পাশে পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সহায়তায় লাগেজটি খুলে দেখা যায়, ভেতরে সেভেন আপ, পেপসি ও কোকাকোলার কাচের বোতলে পেট্রোল ভরা ৩২টি পেট্রলবোমা রাখা আছে।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন বলেন, “মহাসড়কের পাশে পরিত্যক্ত লাগেজ উদ্ধার করা হয়। ভেতরে ৩২টি পেট্রলবোমা ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, নাশকতার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা এগুলো এখানে রেখেছিল। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।”
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা
পুলিশের ধারণা, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে কেউ বা কোনো দল নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। তারা হয়তো কোনো কারণে গোপনে লাগেজটি রেখে পালিয়ে গেছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ত রুট হওয়ায়, সেখানে কোনো ধরণের বিস্ফোরণ ঘটলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভাঙ্গা থানা সূত্রে জানা গেছে, আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এছাড়া স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয়দের আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীরা কিছু সময়ের জন্য থমকে দাঁড়ান। স্থানীয় ব্যবসায়ী হাফিজ মোল্লা বলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ হয়তো লাগেজ হারিয়েছে। পরে যখন পুলিশ এসে খুলল, তখন দেখি ভেতরে বোতল ভর্তি কিছু আছে। জানলাম এগুলো পেট্রলবোমা। সবাই ভয় পেয়ে যায়।”
আরেক বাসচালক জানান, “এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি যায়। কেউ যদি এখানে বোমা ফাটাতো, কত বড় দুর্ঘটনা হতে পারত তা ভাবতেই ভয় লাগে।”
পূর্বের ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না
এর আগেও ভাঙ্গা উপজেলায় বিভিন্ন সময় নাশকতার উপকরণ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বুধবার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে এক অভিযানে ককটেল, পেট্রলবোমা ও বিস্ফোরক তৈরির উপকরণসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই দুই ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা গতকাল যে তিনজনকে আটক করেছি, তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আজকের ঘটনাস্থলের অবস্থান মিলে যেতে পারে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।”
সম্ভাব্য নাশকতার আশঙ্কা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা থাকতে পারে। বিশেষ করে মহাসড়ক ও যানবাহন লক্ষ্য করে হামলার আশঙ্কা থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সব থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের আশপাশে সন্দেহজনক কোনো বস্তু বা ব্যক্তি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরবর্তী পদক্ষেপ
পেট্রলবোমাগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং সেগুলো পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
ওসি আশরাফ হোসেন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ফরেনসিক টিমকে খবর দিয়েছি। কারা এসব বোমা তৈরি করেছে, কোথা থেকে এনেছে এবং কী উদ্দেশ্যে রেখেছে — তা উদঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই দায়ীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
নিরাপত্তা জোরদার ও প্রশাসনের নির্দেশনা
ঘটনার পর পুরো ভাঙ্গা উপজেলায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, “মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয়, সেজন্য আমরা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি।”
অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও মহাসড়ক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আরও আধুনিক করা প্রয়োজন। তারা মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সহযোগিতা বাড়ানো গেলে এই ধরনের নাশকতার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে বোমা ফেলে যাওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া যায় না। এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। জনগণের সচেতনতা ও প্রশাসনের তৎপরতা মিলেই এই ধরনের অপরাধ রোধ করা সম্ভব।”
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা অংশে পেট্রলবোমা ভর্তি লাগেজ উদ্ধারের ঘটনাটি প্রশাসনের সতর্কতা ও স্থানীয়দের সহযোগিতার একটি বড় উদাহরণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কারা এই ঘটনার পেছনে ছিল তা চিহ্নিত করা এবং ভবিষ্যতে যেন এমন নাশকতা না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।
এম আর এম – ২২১৯,Signalbd.com



