আঞ্চলিক

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারসহ ২৪ জেলে উদ্ধার

Advertisement

ইঞ্জিন বিকল হয়ে গভীর সমুদ্রে ভেসে ছিল ‘মদিনা-৬’ নামের ট্রলার, নৌবাহিনীর ‘বানৌজা অপরাজেয়’-এর সাহসী অভিযানে উদ্ধার

বঙ্গোপসাগরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভেসে থাকা একটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ২৪ জন জেলেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সোমবার (১০ নভেম্বর) নিয়মিত টহলের সময় ‘বানৌজা অপরাজেয়’ জাহাজ তাদের উদ্ধার করে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া ট্রলারটির নাম ‘মদিনা-৬’। ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় এটি কয়েকদিন ধরে গভীর সমুদ্রে ভাসমান ছিল, ফলে জেলেদের সঙ্গে বাইরের কোনো যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছিল না। পরে নৌবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রলারসহ জেলেদের নিরাপদে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

নৌবাহিনীর টহল জাহাজের নজরে পড়ে বিপদগ্রস্ত ট্রলার

নৌবাহিনীর আইএসপিআর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরে নিয়মিত টহলরত অবস্থায় ‘বানৌজা অপরাজেয়’ জাহাজটি র‌্যাডারের মাধ্যমে ভাসমান এক ট্রলারকে সনাক্ত করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় ট্রলারটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। পরে জাহাজটি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ‘মদিনা-৬’ নামের ট্রলার এবং তাতে থাকা ২৪ জন জেলেকে উদ্ধার করে।

ট্রলারটি মোংলা ফেয়ারওয়ে বয়া থেকে প্রায় ২৯ মাইল দক্ষিণে ভাসমান অবস্থায় ছিল বলে জানায় নৌবাহিনী। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, গভীর সমুদ্রে ঢেউয়ের তীব্রতা বেশি থাকলেও তারা সতর্কতার সঙ্গে অভিযান সম্পন্ন করেন।

জেলেদের অভিজ্ঞতা: “মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি”

উদ্ধার হওয়া জেলেরা জানান, ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার পর তারা সমুদ্রে দিশেহারা হয়ে পড়েন। গভীর সমুদ্রে কোনো যোগাযোগের মাধ্যম না থাকায় তারা দিনরাত ভেসে ছিলেন এবং জ্বালানি, পানি ও খাবারের সংকট দেখা দেয়।

একজন জেলে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম আর বাঁচব না। ঢেউ আর বাতাসে ট্রলার দুলছিল, কিন্তু আল্লাহর রহমতে নৌবাহিনী এসে আমাদের উদ্ধার করেছে।”

নৌবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার শেষে জেলেদের বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার এবং চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করেন। বর্তমানে সবাই সুস্থ রয়েছেন।

২৯ অক্টোবর কুতুবদিয়া থেকে যাত্রা

নৌবাহিনী জানিয়েছে, ‘মদিনা-৬’ ট্রলারটি গত ২৯ অক্টোবর কুতুবদিয়া ঘাট থেকে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বঙ্গোপসাগরে যায়। কয়েকদিন পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি গভীর সমুদ্রে ভেসে যেতে থাকে।

পরিস্থিতি বুঝতে না পেরে ট্রলারে থাকা জেলেরা বিপাকে পড়েন। একাধিকবার অন্যান্য ট্রলারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি। পরবর্তীতে নৌবাহিনীর টহলরত জাহাজের নজরে আসায় তারা রক্ষা পান।

উদ্ধার অভিযানের পরবর্তী ধাপ ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া

উদ্ধার শেষে নৌবাহিনী ট্রলারসহ ২৪ জন জেলেকে নিরাপদে সুন্দরবন সংলগ্ন হিরণপয়েন্ট এলাকায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ‘কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন’-এর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

কোস্টগার্ডের সদস্যরা ট্রলারের অবস্থান, ইঞ্জিনের ক্ষতি এবং জেলেদের শারীরিক অবস্থা যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। তাদের মধ্যে কারও গুরুতর অসুস্থতা না থাকলেও কয়েকজন ক্লান্তি ও পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন।

নৌবাহিনীর অবদান ও নিরাপত্তা কার্যক্রম

নৌবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনী নিয়মিত সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় টহল কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এর ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে।

আইএসপিআর জানায়, “বাংলাদেশ নৌবাহিনী শুধু প্রতিরক্ষা নয়, জনগণের পাশে দাঁড়াতে সদা প্রস্তুত। গভীর সমুদ্রের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করছেন।”

নিয়মিত টহল না থাকলে ঘটতে পারত বড় দুর্ঘটনা

বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌবাহিনীর এই দ্রুত তৎপরতা না থাকলে জেলেদের প্রাণহানি ঘটতে পারত। সমুদ্রের গভীরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়া ট্রলার প্রায়ই বিপদের মুখে পড়ে, বিশেষ করে নভেম্বর মাসে যখন বাতাস ও ঢেউয়ের তীব্রতা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ মেরিন ফিশিং অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “নৌবাহিনীর নিয়মিত টহল এবং র‌্যাডার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিত। এতে জেলেদের নিরাপত্তা বাড়বে।”

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সময়োপযোগী পদক্ষেপে ২৪ জেলের জীবন রক্ষা পেয়েছে, যা একটি মানবিক ও সাহসী উদ্যোগ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল যে, সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোর নিয়মিত যান্ত্রিক পরীক্ষা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকা কতটা জরুরি।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত তদারকি জোরদার হলে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব হবে।

এম আর এম – ২১৭২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button